মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া জগতের ওপর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি, এবিসি নিউজ এবং সিবিএস-এর মতো প্রভাবশালী মিডিয়া সংস্থাগুলো ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এই ঘটনাগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং কর্পোরেট জগতের রাজনৈতিক চাপের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।
গত বছর, এবিসি নিউজ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একটি মানহানির মামলা নিষ্পত্তি করতে ১৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে। অনেকে মনে করেছিলেন, এই মীমাংসা সম্ভবত একটা ভালো পদক্ষেপ ছিল।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পকে খুশি করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তিনি যেন ‘ইফ ইউ গিভ আ মাউস আ কুকি’ গল্পের মতো, আরও বেশি কিছু চাইছেন।
ডিসেম্বরে এবিসি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং তার আইনজীবীর আইনি ফি বাবদ ১ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়। এছাড়াও, তারা তাদের সংবাদ উপস্থাপক জর্জ স্টেফানোপাউলোস এর একটি ভুল মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
মূলত, ২০১৯ সালে ই. জিন ক্যারলের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে স্টেফানোপাউলোসের একটি ভুল শব্দ প্রয়োগের কারণে এই বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনার নয় মাস পর, এবিসি তাদের কমেডিয়ান জিমি কিমেলের শো বন্ধ করে দেয়। কারণ হিসেবে শোনা যায়, ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) প্রধান ব্রেন্ডন ক্যার, কিমেলের কিছু মন্তব্যের কারণে এবিসির সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন।
শুধু এবিসি নয়, সিবিএসও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলা এড়াতে ১৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে।
অনেকেই মনে করেন, এই পদক্ষেপটি ছিল সিবিএস-এর মূল কোম্পানি প্যারামাউন্টের একটি কৌশল। সেই সময় তারা স্কাইডান্স মিডিয়ার সঙ্গে একটি একত্রীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছিল।
যদিও কোম্পানিগুলো এবং ট্রাম্প, এই দুইয়ের মধ্যে কোনো যোগসাজশের কথা অস্বীকার করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিডিয়া সংস্থাগুলোর এই ধরনের নমনীয়তা ট্রাম্পের ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করার শামিল। সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক ও মিডিয়া সমালোচক জেফ জার্ভিস বলেন, “এটা কোনো ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।” ট্রাম্প নিজেও মিডিয়ার উপর তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, যারা তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবর পরিবেশন করে, তাদের সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিল করা উচিত।
অন্যদিকে, জিমি কিমেলের শো বন্ধ করে দেওয়ার পর, ডিজনি এবং এবিসির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে ডিজনি এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বয়কট করার ডাক দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কর্পোরেট জগৎ ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে ভুল করেছে। কারণ, ট্রাম্প প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যা কোম্পানির শেয়ারের দামে প্রভাব ফেলে।
ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যারা আত্মসমর্পণ করে, তারা অন্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন