যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ, শুক্রবারের প্রতিবেদনে কী?
শুক্রবার প্রকাশিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদনে সম্ভবত তেমন কোনো সুখবর নাও থাকতে পারে। বেশ কয়েক মাস ধরেই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির বাজারে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। নতুন করে বেকারত্বের সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতে কর্মী নিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়াই এর মূল কারণ।
অর্থনীতিবিদদের ধারণা, শুক্রবারের প্রতিবেদনে আগস্ট মাসে নতুন করে মাত্র ৮০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা জুলাই মাসের তুলনায় সামান্য বেশি। জুলাই মাসে নতুন করে ৭৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেই হিসাব পরে সংশোধন করা হয়। মে এবং জুন মাসের তথ্যও কাটছাঁট করা হয়, যার ফলে এই দুই মাসে প্রায় আড়াই লাখ কর্মসংস্থান কমে যায়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ বছরে (কোভিড-১৯ সময়কাল বাদে) কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার সবচেয়ে কম ছিল। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধানকে বরখাস্ত করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক তথ্য পরিবর্তনের অভিযোগ তুলেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভিত্তি হলো দেশটির ভোক্তা এবং শ্রমবাজার। বর্তমানে বাজারে কর্মী নিয়োগের ধীরগতির কারণ হিসেবে অনেকে কর্মীর অভাব, ভোক্তাদের মধ্যে চাহিদা কমে যাওয়া এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) কারণে কর্মীদের কাজ হারানোকে দায়ী করছেন।
অন্যদিকে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শ্রমবাজারে এই ধীরগতি উদ্বেগের কারণ নয়। কারণ, এতে কর্মীর চাহিদা ও সরবরাহ প্রায় কাছাকাছি থাকছে, যা বাজারের জন্য স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
বিভিন্ন তথ্য বলছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক শ্রমশক্তির কারণে শ্রমের সরবরাহ কমছে। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি অর্থনীতির জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যা ব্যবসার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতে ৫৪ হাজার কর্মী নিয়োগ হয়েছে, যা জুলাই মাসের চেয়ে কম।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথমবার বেকারত্বের সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮ হাজার বেশি। যদিও এখনো পর্যন্ত বেকারত্বের সুবিধা পাওয়ার আবেদন আগের বছরের তুলনায় কম, তবে এতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ না পাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রবণতাও বাড়ছে। আগস্ট মাসে কোম্পানিগুলো প্রায় ৮৫ হাজার ৯৭৯ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা জুলাই মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির অর্থনৈতিক পরিবর্তন বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপরও প্রভাব পড়তে পারে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন