জো বাইডেনের ক্যান্সার: আতঙ্কের কারণ? আসল সত্যি!

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই উদ্বিগ্ন, কিভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন ব্যক্তির এই রোগ এত দেরিতে ধরা পড়ল? চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বেগের কারণ থাকলেও, এমনটা অস্বাভাবিক নয়।

বাইডেনের বর্তমান বয়স ৮২ বছর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন সবসময় বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। হোয়াইট হাউসের মেডিকেল ইউনিটের মাধ্যমে তাঁর জন্য দিনে চব্বিশ ঘণ্টা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিষেবা উপলব্ধ ছিল। সামরিক হাসপাতালে তাঁর জন্য বিশেষ সুবিধাও ছিল। সাধারণত, প্রেসিডেন্টদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা এবং অফিসের জন্য উপযুক্ততা যাচাই করার উদ্দেশ্যে কোনো কিছুই বাদ রাখা হয় না।

বাইডেন সহ অন্যান্য প্রেসিডেন্টরা তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কিছু তথ্যও প্রকাশ করেন।

তাহলে প্রশ্ন হলো, ক্ষমতা থেকে কয়েক মাস দূরে থাকা একজন ৮২ বছর বয়সী ব্যক্তির শরীরে কিভাবে চতুর্থ স্তরের ক্যান্সার, যা ইতিমধ্যে হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে, তা শনাক্ত হতে এত দেরি হলো?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, বাইডেনের এই বয়সে নিয়মিত স্ক্রিনিং করার প্রয়োজন নাও থাকতে পারে।

১৯৯০-এর দশক থেকে প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা (PSA test) চালু হয়। এই পরীক্ষায় প্রোস্টেট-নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের মাত্রা দেখা হয়, যা ক্যান্সার শনাক্ত করতে সহায়ক। কিন্তু এই পরীক্ষার ফল অনেক সময় ভুলও হতে পারে।

আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (American Urological Association) বলছে, এই পরীক্ষার ফল ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভুল হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

দ্বিতীয়ত, বাইডেনের ক্যান্সারটি হয়তো সাধারণ স্ক্রিনিংয়ের ফাঁকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরা একে ‘ইন্টারভাল ক্যান্সার’ বলে থাকেন। এমন ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়াতে পারে। ক্যান্সারের ধরন ভেদে, এটি হয়তো PSA তৈরি করেনি, অথবা করলেও তার পরিমাণ এত কম ছিল যে তা স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়েনি।

তবে, উদ্বেগের কারণ নেই, এমনটা বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৫,০০০ পুরুষের মৃত্যু হয় এই রোগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের দেরিতে শনাক্ত হওয়ার আরও একটি কারণ হতে পারে। তাঁর ক্যান্সার হয়তো খুব ধীরে বাড়ছিল, যা নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের সময় ধরা পড়েনি।

বাইডেনের চিকিৎসার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। ক্যান্সার এখন নিরাময়যোগ্য না হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে কয়েক বছর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারণত হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়, যা টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়।

এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, যেমন— ক্লান্তি, গরম লাগা, রাতে ঘাম হওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাড়ের দুর্বলতা এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতি এবং সুযোগ-সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন হতে পারে। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *