যুদ্ধ ও গোপন অস্ত্রের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়: নাৎসিদের জন্য রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করেছিলেন যে ইহুদি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের কথা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধে আছে। জার্মানির সেই ভয়ংকর সময়ে, একদিকে যখন ইহুদিদের উপর চলছিল অবর্ণনীয় নির্যাতন, তখন অনেকেরই জীবন ছিল চরম অনিশ্চিত।
জো ডানথর্ন নামের এক লেখকের পারিবারিক ইতিহাস তেমনই এক ভয়ংকর সত্য উন্মোচন করে, যেখানে তাঁর প্রপিতামহ সিগফ্রাইড মেরজবাখারের নাৎসিদের জন্য রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কথা জানা যায়।
জো-র পরিবারের কাহিনী শুরু হয় তাঁর ঠাকুরমা’র তেজস্ক্রিয় টুথপেস্ট ব্যবহারের গল্প দিয়ে। ‘ডোর্যামাড’ নামের এই টুথপেস্ট তৈরি করতেন সিগফ্রাইড।
১৯৩৫ সালে নাৎসিদের অত্যাচারের কারণে তাঁরা জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীতে জানা যায়, সিগফ্রাইডের তৈরি করা টুথপেস্ট জার্মান সৈন্যদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে এই টুথপেস্টের জুড়ি ছিল না।
কিন্তু জো-এর অনুসন্ধানে আসল সত্য আরও গভীর। সিগফ্রাইড শুধু টুথপেস্টই তৈরি করেননি, বরং তিনি নাৎসি বাহিনীর জন্য তৈরি করেছিলেন মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র।
জার্মানির অরাণিয়েনবার্গ-এ তাঁর একটি গোপন গবেষণাগার ছিল, যেখানে সালফার মাস্টার্ড, ডিপhenyl আর্সাইন ক্লোরাইড এবং ডিপোসজিন-এর মতো ভয়ংকর রাসায়নিক উপাদান তৈরি করা হতো।
এগুলো ছিল সৈন্যদের জন্য তৈরি করা শ্বাসরোধকারী ও বিষাক্ত গ্যাস।
সিগফ্রাইডের এই কাজ যুদ্ধের ভয়াবহতা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে তোলে। তিনি জানতেন, তাঁর তৈরি করা অস্ত্রগুলো মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে।
তা সত্ত্বেও, তিনি নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি, নাৎসিদের ক্ষমতা গ্রহণের পরও তিনি এই কাজ অব্যাহত রাখেন।
জো-এর পরিবারের এই গোপন ইতিহাস তাঁকে গভীর হতাশায় ফেলে দেয়। তিনি তাঁর ঠাকুরমার সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারেন, ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকের সময় তাঁর পরিবার জার্মানি ফিরে গিয়েছিল, যদিও তাঁর মা বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতেন।
জো-এর মা জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন, যা তাঁদের পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত একটি গভীর ক্ষতকে আবার সামনে নিয়ে আসে।
অরাণিয়েনবার্গ শহরটি ছিল নাৎসিদের গোপন কার্যকলাপের কেন্দ্র। এখানে ছিল রাসায়নিক অস্ত্রের গবেষণাগার, গ্যাস মাস্ক তৈরির কারখানা, এবং concentration camp-এর সদর দপ্তর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখানকার মাটি খুঁড়ে এখনো বোমা ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পাওয়া যায়।
জো ডানথর্নের এই পারিবারিক ইতিহাস, যুদ্ধ, ঘৃণা, এবং গোপন অস্ত্রের এক গভীর গল্প। তাঁর পরিবারের অতীতের এই অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করতে গিয়ে, তিনি কেবল নিজের পরিবারের নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্যই এক গভীর বার্তা রেখে গিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান