প্রকাশ্যে: বহু বছর আগের ধর্ষণ মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধানের সাজা!

শিরোনাম: ডিএনএ-র সাহায্যে অপরাধীর খোঁজে: বিতর্কিত ‘জন ডো’ পরোয়ানা

বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির যুগে, ডিএনএ প্রমাণ এখন অপরাধ তদন্তের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, এই ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রায়শই বিতর্ক দেখা যায়, বিশেষ করে যখন ‘জন ডো’ ডিএনএ পরোয়ানার (John Doe DNA warrant) মতো একটি বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োগ হয়।

এই ধরণের পরোয়ানা মূলত অজ্ঞাতনামা সন্দেহভাজনদের সনাক্ত করতে ডিএনএ প্রমাণ ব্যবহার করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে প্রচলিত। সম্প্রতি, এই ধরনের পরোয়ানার মাধ্যমে কীভাবে কয়েক দশক পুরনো একটি ধর্ষণ মামলার সমাধান হয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান গ্রান্ট হার্ডিন-এর ঘটনাটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হার্ডিন বর্তমানে খুন ও ধর্ষণের দায়ে কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

তবে, কিছুদিন আগে তিনি জেল থেকে পালিয়ে যান। হার্ডিনের ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে ১৯৯৭ সালের একটি ধর্ষণ মামলার আলামতের মিল খুঁজে পাওয়ার পর, ১৪ বছর আগের একটি ‘জন ডো’ পরোয়ানা সক্রিয় করা হয়।

এর ফলস্বরূপ, হার্ডিনকে ধর্ষণ এবং আরও দুটি অভিযোগের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই মামলার সূত্র ধরেই ডিএনএ প্রযুক্তির জটিলতা এবং এর আইনি প্রয়োগের বিভিন্ন দিক নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

আসলে, ‘জন ডো’ ডিএনএ পরোয়ানা হলো এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো অপরাধের ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ডিএনএ-র ভিত্তিতে, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের গবেষণা শাখা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জাস্টিস (National Institute of Justice)-এর মতে, এই ধরনের পরোয়ানা, মামলার সময়সীমা (statute of limitations) পার হয়ে গেলেও, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে সাহায্য করে।

সহজ ভাষায় বললে, কোনো মামলার তদন্ত যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হয়, তবে অনেক সময় অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা যায় না। কিন্তু ‘জন ডো’ পরোয়ানার মাধ্যমে, ডিএনএ-র প্রমাণ থাকলে, সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

এই ধরনের পরোয়ানা ব্যবহারের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, ২০০০ সালে উইসকনসিনের একটি ঘটনা। সেখানে ১৯৯৪ সালের একটি যৌন নিপীড়ন মামলার আসামি সনাক্ত করতে, মামলার সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক আগে, এই পরোয়ানা ব্যবহার করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে, ডিএনএ প্রোফাইলের মাধ্যমে ববি ড্যাবনি নামের এক ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয় এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

তবে, এই পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেক আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডিএনএ প্রমাণ সব সময় নির্ভুল নাও হতে পারে। নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণের সময় ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাছাড়া, এই ধরনের পরোয়ানা কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অধিকার খর্ব করতে পারে। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্রিমিনাল ডিফেন্স লয়ার্স (National Association of Criminal Defense Lawyers) এই ধরনের পরোয়ানাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছে যে, এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

আইনজ্ঞ এমিলি ক্লার্ক-এর মতে, ‘জন ডো’ ডিএনএ পরোয়ানা, আইনসভা কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমা এড়িয়ে অভিযুক্তদের অধিকার খর্ব করে। তার মতে, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে, এই সময়সীমা সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়া উচিত।

ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে অপরাধ তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে, এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *