জন ও পলের প্রেম: গানের সুরে এক অন্যরকম বন্ধুত্ব!

বিখ্যাত সঙ্গীত দল বিটলস, যারা বিংশ শতাব্দীর সঙ্গীতের জগৎকে নতুন দিশা দিয়েছিল, তাদের দুই প্রধান সদস্য জন লেনন এবং পল ম্যাককার্টনি।

তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক, যা গানের মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করেছে, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইয়ান লেসলির নতুন বই – ‘জন অ্যান্ড পল: এ লাভ স্টোরি ইন সংস’। বইটি মূলত এই দুই কিংবদন্তীর মধ্যেকার গভীর বন্ধুত্বের গল্প বলে, যা সঙ্গীতের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

বইটি লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, জন লেনন এবং পল ম্যাককার্টনির মধ্যকার সম্পর্ককে একটি ‘ব্রোমান্স’ হিসেবে তুলে ধরা।

‘ব্রোমান্স’ শব্দটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, গভীর আবেগপূর্ণ, ভালোবাসাপূর্ণ, তবে কোনো প্রকার রোমান্টিক সম্পর্কবিহীন একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বন্ধন। লেখক দেখিয়েছেন, এই দুই বন্ধুর মধ্যেকার সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী, যা তাদের সঙ্গীতের সৃজনশীলতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, বিশেষ করে শৈশবে মায়ের মৃত্যু, তাদের মধ্যে গভীর একটি সম্পর্ক তৈরি করেছিল। এই গভীরতাই তাদের গান লেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

বইটিতে বিটলসের বিখ্যাত গানগুলো বিশ্লেষণ করে লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে জন ও পল একে অপরের প্রতি তাদের আবেগ প্রকাশ করেছেন।

‘ইয়েস্টারডে’, ‘স্ট্রবেরি ফিল্ডস ফরেভার’, ‘Hey Jude’, ‘এলেনর রিগবি’র মতো কালজয়ী গানগুলোতে তাদের সম্পর্কের গভীরতা খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু গানই নয়, তাদের কথোপকথন এবং একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতাও এই বইটিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

তাদের গান লেখার পদ্ধতি, যা প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসঙ্গে কাটানো এবং একে অপরের মুখামুখি বসে থাকার মাধ্যমে সম্পন্ন হতো, তা তাদের মধ্যেকার বন্ধনের গভীরতা প্রমাণ করে।

তবে, বিটলসের ভাঙনের পেছনে কিছু কারণ ছিল।

জন লেননের ইয়োকো ওনো এবং পল ম্যাককার্টনির স্ত্রী লিন্ডা ইস্টারম্যানের প্রভাব তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরায়। ইয়োকো ওনোর উপস্থিতি জনের জীবনে এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি যেন পলের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেন।

অন্যদিকে, লিন্ডা ইস্টারম্যানের পরিবারের কারণে অ্যাপলের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে, যা জনের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।

বইটি লেখার ক্ষেত্রে লেখক ইয়ান লেসলি, জন ও পলের সম্পর্কের জটিলতা এবং তাদের সঙ্গীতের প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন।

তিনি গানের সুর এবং কথার মধ্যে লুকানো অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। গানের মাধ্যমে কীভাবে তারা তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতেন, তা বিশ্লেষণ করেছেন।

তবে, সমালোচকরা বলছেন, লেখকের পল ম্যাককার্টনির প্রতি কিছুটা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।

‘জন অ্যান্ড পল: এ লাভ স্টোরি ইন সংস’ বইটি বিটলস প্রেমীদের জন্য একটি মূল্যবান সংযোজন। এটি শুধুমাত্র একটি জীবনীমূলক রচনা নয়, বরং সঙ্গীতের মাধ্যমে দুটি মানুষের গভীর সম্পর্কের এক অসাধারণ চিত্র।

তথ্যসূত্র: নিজস্ব প্রতিবেদন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *