যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কটি এখন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রবার্টস নীরব থেকেছেন, আবার কখনও কখনও তিনি ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সম্প্রতি, একজন বিচারকের প্রতি ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক মন্তব্যের পর রবার্টসের বক্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জানা যায়, ট্রাম্প সম্প্রতি একটি টুইট বার্তায় ফেডারেল বিচারক জেমস বোয়াসবার্গকে ‘বামপন্থী উন্মাদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাকে অভিশংসন করার দাবি জানান।
বোয়াসবার্গ বর্তমানে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির দায়িত্বে ছিলেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস একটি বিবৃতি দেন।
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে অভিশংসন করা একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ নয়। এই ধরনের মতবিরোধের জন্য আপিল করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান।”
বিশ্লেষকদের মতে, রবার্টসের এই বক্তব্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার একটি স্পষ্ট বার্তা। এর আগে ২০১৮ সালেও একবার ট্রাম্প বিচারকদের সমালোচনা করলে রবার্টস এর জবাব দিয়েছিলেন।
তখন ট্রাম্প একজন বিচারককে ‘ওবামা-বিচারক’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। জবাবে রবার্টস বলেছিলেন, “আমাদের এখানে ওবামা-বিচারক অথবা ট্রাম্প-বিচারক নেই। সকল বিচারক তাদের সামনে আসা সকলের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।”
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, রবার্টস প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত কিছু নীতির পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার সিদ্ধান্তকে তিনি সমর্থন করেছিলেন।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে রবার্টস প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। যেমন, ২০২০ সালের আদমশুমারিতে নাগরিকত্বের প্রশ্ন যুক্ত করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তিনি ভোট দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রবার্টস এবং তার সহকর্মীদের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, গত জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেয়।
যদিও, রবার্টস এবং আদালতের অন্য বিচারপতিদের মধ্যে আদর্শগত বিভাজন মাঝে মাঝে দেখা যায়, তবে তারা বিতর্কের বিষয়গুলোতে কিছুটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, কোনো বিচারককে অভিশংসিত করতে হলে প্রতিনিধি পরিষদে অভিযোগ উত্থাপন এবং সিনেটে তা প্রমাণিত হতে হয়।
তবে, সাধারণত গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত বিচারকদের বিরুদ্ধেই এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন