“খুনি জোকার”-এর ভয়ঙ্কর কীর্তি: জন ওয়েইন গেসি’র নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
১৯৭০-এর দশকে আমেরিকার শিকাগো শহরে জন ওয়েইন গেসি নামের এক ব্যক্তির ভয়ংকর গোপন পরিচয় ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। বাইরে থেকে তিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তি।
স্থানীয় শিশুদের হাসপাতালে ‘পোগো দ্য ক্লাউন’ সেজে আনন্দ দিতেন, এমনকি পোলিশ কনস্টিটিউশন ডে প্যারেডের পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। সমাজের চোখে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত এই গেসি’র আসল রূপ ছিল ভয়ংকর।
কিন্তু ১৯৮০ সালের মার্চ মাসে আদালত যখন গেসিকে ৩৩টি খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে, তখন সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে, গেসি কমপক্ষে তেত্রিশ জন যুবক ও কিশোরকে হত্যা করে।
গেসি’র শিকারদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অল্পবয়সী ছেলে, যাদের সে তার বাড়িতে ডেকে এনেছিল। এরপর তাদের উপর চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন, শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হতো।
গেসি’র জন্ম ১৯৪২ সালে, শিকাগোতে। তার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খুবই খারাপ। বাবার কঠোর শাসনের শিকার হয়ে গেসি একসময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। ১৯৬০-এর দশকে গেসি’র জীবনে আসে প্রথম গুরুতর অপরাধের ঘটনা। তিনি দুই কিশোরকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং এর ফলস্বরূপ কারাদণ্ড ভোগ করেন।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, গেসি ১৯৭২ সালে ক্যারোল হফকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি।
গেসি’র গাড়ির ভেতর থেকে কিশোর ছেলেদের কিছু জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়ার পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর কিছুদিন পরই গেসি’র নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
গেসি’র শিকারদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন বয়সের তরুণ এবং কিশোর। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা যায়, যেমন – টিমোথি ম্যাকয়, জন বাটকোভিচ, ফ্রান্সিস ওয়েন আলেকজান্ডার, এবং রবার্ট পিয়েস্ট।
তদন্তকারীরা গেসি’র বাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন ভিকটিমের দেহাবশেষ উদ্ধার করে, যা ঘটনার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দেয়। অনেকের মৃতদেহ গেসি তার বাড়ির নিচের খালি জায়গায় পুঁতে রেখেছিল।
জায়গা সংকুলান না হওয়ায়, সে কিছু দেহ মিশিগান হ্রদের পাশে ফেলে দেয়।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে, ১৫ বছর বয়সী রবার্ট পিয়েস্ট নিখোঁজ হওয়ার পর গেসি’র অপরাধের তদন্ত শুরু হয়। পিয়েস্টের মা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে, তদন্তকারীরা গেসি’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার যোগসূত্র খুঁজে পান।
এরপর গেসি’র বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং সেখানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়।
দীর্ঘ বিচারের পর, ১৯৮০ সালে গেসিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ১০ই মে, ৫২ বছর বয়সে, তাকে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জন ওয়েইন গেসি’র এই ভয়ংকর কাহিনী আজও মানুষের মনে ভয়ের সৃষ্টি করে। সমাজের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই ধরনের অপরাধীরা যে কত ভয়ংকর হতে পারে, গেসি’র ঘটনা তারই প্রমাণ।
তথ্য সূত্র: পিপল