জোনাকি পোকারা কি আর দেখা যাবে? পরিবেশ বিপর্যয়ের এক গভীর আশঙ্কা
বর্ষাকালে রাতের আকাশে মিটিমিটি আলো জ্বেলে জোনাকিরা যেন এক মায়াবী জগৎ তৈরি করে। রাতের অন্ধকারে তাদের এই আলো ঝলমলে দৃশ্য সত্যিই মন মুগ্ধকর।
কিন্তু প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য ধীরে ধীরে যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশ্বজুড়ে জোনাকি পোকার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জোনাকি পোকার বিলুপ্তির পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আবাসস্থল ধ্বংস, অতিরিক্ত আলো দূষণ, কীটনাশকের ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
দ্রুত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের ফলে জোনাকিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। রাতের আকাশে অতিরিক্ত আলোর কারণে তারা সঙ্গীর সাথে মিলিত হতে সমস্যা অনুভব করে।
কীটনাশক তাদের খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা তাদের জীবনচক্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি তাদের বাসস্থানের জন্য হুমকি স্বরূপ।
বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় ২,৬০০ প্রজাতির জোনাকি পোকা রয়েছে।
তবে এদের মধ্যে মাত্র ১৫০টির সংরক্ষণে কতটা জরুরি, তা বিবেচনা করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, অনেক প্রজাতির জোনাকি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই। তাদের খাদ্য, জীবনধারণ এবং আবাসস্থল সম্পর্কে জানার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোনাকিদের বাঁচাতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আবাসস্থল পুনরুদ্ধার, এবং পরিবেশ সুরক্ষার উপর জোর দিতে হবে।
আমাদের চারপাশে রাতের বেলায় আলোর ব্যবহার কমিয়ে, কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে এবং গাছপালা লাগিয়ে জোনাকিদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।
এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা চলছে।
গবেষকরা জোনাকিদের প্রজাতি শনাক্ত করা এবং তাদের সংরক্ষণে কাজ করছেন।
আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো জোনাকি পোকার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর দেখতে পাবো না।
আসুন, পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি এবং জোনাকি পোকার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক