শিরোনাম: বিরল রোগে আক্রান্ত তরুণীর মাতৃত্বের স্বপ্ন: সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের প্রত্যাশা
একজন তরুণীর জীবনে যখন ঋতুস্রাব শুরু হলো না, তখনই যেন তার শরীরে বাসা বাঁধা এক গভীর রহস্যের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বছর কয়েক পরে, চিকিৎসকেরা জানালেন, তিনি জন্মগতভাবে জরায়ুবিহীন – ‘মেয়ার-রোকিটানস্কি-কাস্টার-হওসার সিনড্রোম’ (MRKH) নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই কঠিন সত্যকে সঙ্গী করে, মা হওয়ার স্বপ্নপূরণের পথে অবিরাম ছুটে চলেছেন তিনি।
তরুণীর নাম লেসি, যিনি টিকটকে @lacey_moore3 নামে পরিচিত। কিশোরী বয়সে যখন তার ঋতুস্রাব শুরু হয়নি, তখন থেকেই তার মনে কিছু একটা ভিন্নতার আভাস লাগে। বন্ধুদের মাসিক শুরু হয়ে গেলেও, তার ক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটছিল না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন তার মা, আন্ডি (@andye_n)। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথমে বিষয়টি স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হলেও, পরে আলট্রাসাউন্ড এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি ধরা পরে।
চিকিৎসকেরা জানালেন, লেসি জন্মগতভাবে জরায়ু নিয়ে জন্মায়নি। এই কথাটি যেন লেসির হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করলো। কারণ, মা হওয়ার স্বপ্নই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা। তবে, চিকিৎসক তাকে হতাশ না হতে এবং বিকল্প পথ খুঁজতে উৎসাহিত করেন। লেসি এবং তার মা, দুজনেই এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
লেসির মা আন্ডি জানান, প্রথম দিকে তারা এর প্রতিকারের উপায় খুঁজছিলেন। তাদের মনে হতো, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সমাধান আছে। এরপর তারা বোস্টন চিলড্রেনস হাসপাতালে এক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সেখানে বিস্তারিত পরীক্ষার পর রোগটি নিশ্চিত হওয়ার পর, ভবিষ্যতের শারীরিক সম্পর্ক এবং তার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যদিও, কোনো স্থায়ী সমাধান ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে লেসির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল মানসিক সমর্থন। মা হিসেবে আন্ডি সবসময় মেয়ের পাশে ছিলেন, সাহস জুগিয়েছেন। লেসিকে একা অনুভব করতে না দেওয়ার জন্য, তিনি একটি MRKH সাপোর্ট গ্রুপের সন্ধান পান। সেখানে গিয়ে লেসি আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়, যারা একই সমস্যায় ভুগছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে লেসি বুঝতে পারে, সে একা নয়। এই অভিজ্ঞতা তার মানসিক শক্তি যোগায় এবং ভবিষ্যতের পথ চলতে সাহায্য করে।
লেসির স্বামী, পিট সবসময় তার পাশে ছিলেন। বিয়ের আগে লেসি যখন তার রোগ সম্পর্কে পিটকে জানায়, তখন পিট তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, “সময় আসলে আমরা একসঙ্গে পথ খুঁজে বের করব। এতে আমার কিছু যায় আসে না।” পিটের এই সমর্থন লেসিকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
চিকিৎসা এবং সম্ভাব্য সমাধানের জন্য লেসি ও পিট নেব্রাস্কা থেকে জর্জিয়াতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে সারোগেসির (surrogacy) সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি। বর্তমানে তারা একটি ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে আছেন, যিনি তাদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে প্রস্তুত। পিটের প্রত্যাবর্তনের পরেই তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি নিতে চান। এই যাত্রায় তাদের প্রয়োজন সমাজের সমর্থন এবং আর্থিক সহযোগিতা।
মা আন্ডি বলেন, লেসির মধ্যে সবসময় একটা আলো দেখতে পাওয়া যায়। তিনি চান, কেউ যেন সেই আলো নিভিয়ে দিতে না পারে। তিনি আরও যোগ করেন, অনেক সময় অন্যদের কাছে মাতৃত্ব সহজ মনে হলেও, লেসির মতো নারীদের জন্য এটি কতটা কঠিন, তা হয়তো অনেকেই উপলব্ধি করতে পারে না।
লেসি এবং তার মা, উভয়েই অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান। কারো সন্তান না হলে, তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন না করার পরামর্শ দেন তারা। বরং তাদের পাশে থেকে সমর্থন যোগানো উচিত।
তথ্য সূত্র: পিপলস