১৪ দলের জার্সিতে: খেলার মাঠে টিকে থাকার লড়াইয়ে জশুয়া জনসন!

জোশ জনসন: এক ফুটবলারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ফুটবল লীগ (এনএফএল) পেশাদার আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর। এই লীগের একজন খেলোয়াড়, জোশ জনসন, যিনি ১৪টি ভিন্ন দলে খেলেছেন, খেলাধুলার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কিভাবে টিকে থাকা যায়, এবং নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা যায়।

২০০৮ সালে, যখন তিনি প্রথম এনএফএলে পা রাখেন, তখন পরিস্থিতি আজকের থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। টম ব্র্যাডি তখনও তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে ছিলেন, এবং অ্যারন রজার্স, যিনি বর্তমানে লীগের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়, সবেমাত্র গ্রিন বে প্যাকার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।

সেই সময়ে, তরুণ জোশ জনসন ছিলেন একজন উঠতি খেলোয়াড়।

স্যান দিয়েগোতে কলেজ ফুটবল খেলার পর, জনসন ২০০৮ সালের এনএফএল ড্রাফটে ট্যাম্পা বে বুকানিয়ার্স দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। এরপর তিনি সান ফ্রান্সিসকো ফোরটি নাইনার্স, বাল্টিমোর রেভেনস-এর মতো বিভিন্ন দলে খেলেছেন।

খেলার সূত্রে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয়েছে। এই দীর্ঘ ভ্রমণে তিনি যেমন সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন, তেমনই একাকীত্ব, সন্দেহ আর হতাশার সঙ্গেও লড়াই করেছেন।

ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। একবার তো নিজের শহর সান ফ্রান্সিসকোতে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েছিলেন।

সেই সময়টা ছিল তার জন্য খুবই কঠিন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি সবসময় নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, কেন তিনি ফুটবল খেলেন।

উত্তরটা ছিল একটাই—কারণ তিনি ফুটবল ভালোবাসেন, মাঠের ঘাস ভালোবাসেন, উন্নতি করতে ভালোবাসেন, এবং প্রতিদ্বন্দিতা করতে ভালোবাসেন।

এরপর শুরু হয় তার দল পরিবর্তনের এক নতুন অধ্যায়। ২০১৬ সালে তিনি এক বছরে চারটি ভিন্ন দলে খেলেছেন। দল পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াটি তার জীবনে অনেক আবেগ নিয়ে এসেছিল।

মাঝে মাঝে তিনি হতাশ হয়ে পড়তেন, এবং একাকী অনুভব করতেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, ফুটবল নিছক একটি খেলা নয়, এটি একটি ব্যবসা।

জনসন মনে করেন, বিভিন্ন কোচের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান এবং সতীর্থদের সঙ্গে তৈরি হওয়া সম্পর্ক তাকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। তিনি খেলা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন, যা তাকে দলের কাছে মূল্যবান করে তুলেছে।

মাঠের বাইরের সময়েও তিনি খেলা সম্পর্কে পড়াশোনা করতেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন, এবং ‘ম্যাডেন’ (Madden) নামক একটি ভিডিও গেমের মাধ্যমে খেলার কৌশল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতেন।

জোশ জনসন তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক কিংবদন্তি কোচের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ছিল, তাদের সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনা করতেন।

জনসন মনে করেন, ভালো সম্পর্ক তৈরি করার কারণে তিনি এখনো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটন কমান্ডার্সের হয়ে খেলছেন। তিনি সব সময় তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেন।

তিনি তাদের বলেন, “জীবনে অনেক উত্থান-পতন আসবে, কিন্তু কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত না। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”

জোশ জনসনের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুধু একজন ফুটবলারের গল্প নয়, এটি আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। প্রতিকূলতাকে জয় করে কিভাবে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়, জনসন যেন তারই উদাহরণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *