শোকের ছায়া: ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিক হোসামের আত্মত্যাগ!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আল জাজিরা মুবাশিরের সাংবাদিক হোসাম শাবাতের মৃত্যুতে শোকের ছায়া। খবরটি এখন শুধু একটি মৃত্যুর সংবাদ নয়, বরং সত্য প্রকাশের জন্য একজন সাহসী মানুষের আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি।

যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও যারা কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন হোসাম। ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে থেকেই তিনি জানতেন, হয়তো একদিন সত্যের পথে হেঁটে তাকে জীবন দিতে হবে।

হোসামের মা আমাল শাবাত এখনো যেনো বিশ্বাস করতে পারছেন না তার আদরের ছেলেটি আর নেই। “আমার ছেলে শহীদ, হোসাম… আমার ছেলে বীর।”

কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলছিলেন। শোকাহত মায়ের আহাজারি যেন আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছিল। গাজায় হোসামের “দার আযা”-তে (শোকের স্থান) সমবেত হয়েছিলেন স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে সবাই যেনো এক গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন।

হোসাম শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন মানুষের আপনজন। দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন।

হোসামের ভাই মাহমুদ শাবাত জানান, তার ভাই সবসময় বলতেন, “যুদ্ধ-সংবাদ পরিবেশন চলতেই থাকবে, এমনকি মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও।” তিনি আরও বলেন, “কোনো গণহত্যা ঘটলে যদি কেউ তা নথিভুক্ত না করে, তবে যেনো কিছুই ঘটেনি।”

হোসামের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন সবার প্রিয় এবং সবসময় হাসিখুশি একজন মানুষ। আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ কুরাইকা বলেন, “হোসাম তার ক্যামেরা ও কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষগুলোর প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল।”

সহকর্মী ইউসুফ ফারেস জানান, বোমাবর্ষণের সময় অন্যান্য সাংবাদিকরা যখন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চাইতেন, তখন হোসাম খবর সংগ্রহের জন্য ছুটে যেতেন। “হোসাম ছিলেন খুবই সরল মনের মানুষ, তার মাঝে ছিল বিশাল একটি শিশুর হৃদয়। আমরা প্রায়ই তার জন্য শঙ্কিত থাকতাম।”

হোসামের আত্মত্যাগের কথা বলতে গিয়ে মাহমুদ চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, “হোসাম চেয়েছিল পুরো সত্যটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। সে সবসময় বলতো, খবর পরিবেশন বন্ধ হবে না, যদি জীবন দিতে হয়, তবুও না।”

হোসামের পরিবার সবসময় শঙ্কিত থাকত, কারণ তারা জানত, যেকোনো মুহূর্তে এমন কিছু ঘটতে পারে। মাহমুদ বলেন, “আমরা সবসময় আলোচনা করতাম, যদি হোসামকে হারাতে হয়, তাহলে কিভাবে তার ‘দার আযা’-র আয়োজন করব।”

হোসামের পরিবার তাদের কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে। তাদের ভাষায়, “আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে, আমরা অন্তত তাকে শেষ কয়েকটা দিন কাছে পেয়েছিলাম।”

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *