মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আদালতের হস্তক্ষেপ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার অভিযোগে অভিযুক্ত কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে হেফাজতে নিতে পারবে না দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। মেরিল্যান্ডের একজন ফেডারেল বিচারক এই নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, টেনেসিতে মানব পাচারের অভিযোগে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় যদি গার্সিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে তাকে অবিলম্বে হেফাজতে নিতে পারবে না আইসিই। বিচারক পাওলা জিনিস এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে, গার্সিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বহিষ্কার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে তিন কার্যদিবসের নোটিশ দেওয়ার জন্য সরকারপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে, মার্চ মাসে গার্সিয়াকে তার দেশ এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
বিচারক গার্সিয়ার আগের ফেডারেল তত্ত্বাবধান পুনর্বহাল করারও নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তত্ত্বাবধানে তিনি বেশ কয়েক বছর মেরিল্যান্ডে বসবাস ও কাজ করতে পারতেন এবং সময়ে সময়ে আইসিইর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
বিচারক জিনিস তার আদেশে উল্লেখ করেছেন, ‘আদালতকে আশ্বস্ত করতে বিবাদীরা খুব সামান্যই করেছেন, যাতে গার্সিয়ার যথাযথ অধিকার রক্ষা করা যায়।’
২০১৯ সালে গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত না পাঠানোর জন্য একটি আদালতের নির্দেশ ছিল, কারণ সেখানে তিনি গ্যাং সহিংসতার শিকার হতে পারেন। তবে, মার্চ মাসে তাকে ভুলভাবে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।
এর ফলে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিতর্কে গার্সিয়া একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
২০২২ সালের একটি ঘটনার সূত্র ধরে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয় গার্সিয়ার বিরুদ্ধে। তখন, অতিরিক্ত গতির কারণে একটি গাড়ি থামানো হয়, যাতে গার্সিয়া ৯ জন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন।
টেনেসির পুলিশ মানব পাচারের সন্দেহ করলেও, তাকে গাড়ি চালিয়ে যেতে দেয়। টেনেসির আদালতে গার্সিয়ার আইনজীবীরা তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করেছেন, তবে আইসিই হেফাজতে নেওয়ার এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করার কোনো সম্ভাবনা থাকলে তারা রাজি নন।
ওই আদালতের একজন ফেডারেল বিচারকও গার্সিয়ার মুক্তিযোগ্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিচারক ওয়াভারলি ক্রেনশ জানিয়েছেন, উপযুক্ত শর্তে মুক্তি দেওয়া হলে গার্সিয়ার পালিয়ে যাওয়া বা সমাজের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে, গার্সিয়ার আইনজীবীদের অনুরোধে বিচারক বারবারা হল্মস তার মুক্তির আদেশ স্থগিত করেছেন। বর্তমানে, গার্সিয়ার মুক্তির বিষয়টি ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে বিচার শুরুর আগে তারা গার্সিয়াকে এল সালভাদর বাদে অন্য কোনো দেশে, যেমন—মেক্সিকো বা দক্ষিণ সুদানে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করবেন। কারণ, তাদের মতে গার্সিয়া সমাজের জন্য বিপজ্জনক।
গার্সিয়ার আমেরিকান স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা, মার্চ মাসে তার স্বামীর ভুলভাবে বিতাড়িত হওয়ার ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মেরিল্যান্ডের আদালতে মামলা করেছেন এবং পুনরায় বিতাড়ন বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের যুক্তি, গার্সিয়াকে বিতাড়িত করা যেতে পারে, কারণ তিনি ২০১১ সালের দিকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এছাড়া, ২০১৯ সালে একজন মার্কিন অভিবাসন বিচারক তাকে বিতাড়নের যোগ্য বলে রায় দিয়েছিলেন।
যদিও, তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। গার্সিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ওই রায়ের পর তাকে ফেডারেল তত্ত্বাবধানে মুক্তি দেওয়া হয়, তিনি ফেডারেল ওয়ার্ক পারমিট পান এবং প্রতি বছর আইসিইর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি আদালতের নথিতে জানিয়েছে, তারা মার্চ মাসে গার্সিয়াকে বিতাড়িত করার সময় তার তত্ত্বাবধানে থাকার বিষয়টি বাতিল করে দেয়। তাদের দাবি, গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস