যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত বাংলাদেশি ছাত্রকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যিনি ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক সোমবার এই আদেশ দেন।
আদালত মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রকাশ্যে কথা বলার জন্য ওই ছাত্রকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, এমনটা প্রমাণ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, মোহাম্মদ হোক নামের ওই ছাত্র, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং ২০২১ সালে বৈধ এফ-১ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, তাকে গত মার্চ মাসে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (Department of Homeland Security) কর্মকর্তারা তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে।
জানা যায়, ক্লাস শেষে ফেরার পথে কর্মকর্তারা তাকে অনুসরণ করে এবং তার বাবা-মায়ের উপস্থিতিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিচারক জেরি ব্ল্যাকওয়েল এই ঘটনার পর হোককে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি ট্রাম্প প্রশাসনের একটি কার্যক্রমের সঙ্গে মিলে যায়।
যেখানে গাজায় যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদে জড়িত এবং ফিলিস্তিনের মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলা অ-নাগরিকদের টার্গেট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আদালতের আদেশে বিচারক লেখেন, “আদালতের রেকর্ডে এমন যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যা ইঙ্গিত করে যে, হোককে তার মত প্রকাশের কারণে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে। তিনি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে কথা বলেছিলেন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই গ্রেপ্তার, ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো এবং গাজায় সহিংসতার সমালোচনা করা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের টার্গেট করার সরকারি নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
বিচারক ব্ল্যাকওয়েল আরও জানান, বিচার বিভাগ হোকের প্রাথমিক গ্রেপ্তার এবং তার পরবর্তী আটকের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্র হোক আদালতে যুক্তি দেখান যে, তাকে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের কারণে নয়।
তার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, হোকের ছাত্র ভিসা এবং স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (SEVIS) রেকর্ড বাতিল করা হয়েছে।
সিএনএন-এর পক্ষ থেকে বিচারকের এই আদেশের বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
আদালতের শুনানিতে, হোকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং তাকে আটক রাখা হয়। বিচারক ব্ল্যাকওয়েল তার মুক্তি আদেশে সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছে, যা তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে।”
প্রথমে তারা ভিসার নিয়ম ভঙ্গের কথা বলেছে, পরে অপরাধমূলক রেকর্ডের কথা উল্লেখ করেছে।
বর্তমানে, হোক জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইন মিনেসোটার (American Civil Liberties Union in Minnesota) আইন পরিচালক তেরেসা নেলসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা মোহাম্মদ হোকের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় আনন্দিত, তবে আমরা গভীরভাবে অনুভব করি যে, হোককে প্রথম থেকেই আটক করা উচিত হয়নি।
আমরা জানি, হোক তার কারাবাসের ৪০ দিন কোনোভাবেই ফেরত পাবেন না।
এই মামলার পাশাপাশি, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হোকের বিরুদ্ধে যে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে, সেটিও এখন চলমান থাকবে।
এই ঘটনার বাইরে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়েছেন আরও অনেকে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী কর্মী মাহমুদ খলিল এবং মোহসেন মাদাওয়িকে তাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (গ্রিন কার্ড) বাতিল করে বিতাড়িত করার নির্দেশ দিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
তাদের যথাক্রমে মার্চ ও এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার করা হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন