আদালতের আদেশে মুক্তি, কিন্তু কারাগারে আটকের ফন্দি! অভিবাসীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মানব পাচার মামলায় অভিযুক্ত কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার জামিনের নির্দেশ দিলেও তাকে মুক্তি দিতে রাজি নয় দেশটির অভিবাসন দপ্তর। ভুল করে বিতাড়িত হওয়ার পর এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং এরপর তাকে পুনরায় আটকের সিদ্ধান্তের কারণে ঘটনাটি বর্তমানে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ১৩ই জুন তারিখে শুনানিতে সরকারি আইনজীবীরা জানান, যদি অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে জামিন দেওয়া হয়, তাহলে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) তাকে হেফাজতে নেবে। সেক্ষেত্রে বিচার শুরুর আগেই সম্ভবত তাকে পুনরায় নিজ দেশ এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

আদালতে বিচারক বারবারা হলমেস জানিয়েছেন, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার মুক্তি দেওয়া হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত কার্যত একটি ‘আনুষ্ঠানিকতা’র পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, কেননা আইস তাকে সম্ভবত আটক করবেই। তবে বিচারক এটাও উল্লেখ করেছেন যে, প্রত্যেক নাগরিকই নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পাওয়ার অধিকারী এবং বিচারের জন্য তাকে ফেডারেল হেফাজতে রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে।

বিচারক হলমেস তার রায়ে বলেন, সরকার অ্যাব্রেগোর দেশত্যাগের ঝুঁকির প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে, তিনি যে সমাজের জন্য বিপজ্জনক, অথবা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন, এমন প্রমাণও তারা পেশ করতে পারেনি। বিচারক লেখেন, “আদালত, অ্যাব্রেগোর মুক্তি অন্যদের বা সমাজের জন্য কোনো গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, এমন কোনো প্রমাণ পায়নি।”

আদালতের নথি অনুযায়ী, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া মানব পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা বলছেন, মূলত ভুল করে বিতাড়িত করার ‘ক্ষতি’ ঢাকার জন্যই এই মামলা সাজানো হয়েছে।

আদালতে শুনানির সময়, মধ্য টেনেসির ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি রব ম্যাকগুইর যুক্তি দিয়েছিলেন যে অ্যাব্রেগোকে কারাগারে রাখার একটি কারণ হলো, সম্ভবত আইস তাকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করবে। তবে বিচারক হলমেস জানান, তিনি ‘আইস-এর কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান না’। তিনি আরও বলেন, “আমি যদি মি. অ্যাব্রেগোকে মুক্তি দিই, তাহলে মুক্তির শর্ত আরোপ করব এবং মার্কিন মার্শাল তাকে মুক্তি দেবেন।”

বিচারক পরামর্শ দেন, বিচার বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করুক, তাদের কাছে এই ব্যক্তির বিচার আগে, নাকি তাকে বিতাড়িত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও মামলার শুনানির কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

আদালতে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবী উইল অ্যালেনসওয়ার্থ জানান, এখনই তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো যাবে না। কারণ ২০১৯ সালের একটি আদালতের আদেশ অনুসারে, গ্যাং সহিংসতার কারণে তিনি সেখানে (এল সালভাদরে) ঝুঁকিতে রয়েছেন। যদিও সরকার তাকে অন্য কোনো দেশে পাঠাতে পারে, তবে এক্ষেত্রে আগে প্রমাণ করতে হবে যে, সেই দেশ তাকে গ্রহণ করতে রাজি এবং তাকে পুনরায় এল সালভাদরে ফেরত পাঠাবে না।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে টেনেসিতে অতিরিক্ত গতির কারণে ট্রাফিক স্টপেজের সময় অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সেই সময় তিনি একটি গাড়িতে ৯ জন যাত্রী বহন করছিলেন। যদিও কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়েছিল, কিন্তু তাকে শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

অভিযোগের শুনানিতে ম্যাকগুইর আরও জানান, অ্যাব্রেগোর বিরুদ্ধে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচার, এবং নারীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে এসবের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তবে ম্যাকগুইর বলেন, এগুলো প্রমাণ করে যে অ্যাব্রেগো একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং তাকে কারাগারে রাখা উচিত।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন দপ্তর অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে দ্রুত বিতাড়িত করার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *