ভুল! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে হতবাক বিচারক, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছেন নির্বাসিত!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফেডারেল বিচারক ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, ভুলভাবে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে দ্রুত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। শুক্রবার এই রায় ঘোষণার আগে বিচারক পাওলা জিক্সিনিস, কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার নির্বাসনকে “একটি অবৈধ কাজ” হিসেবে অভিহিত করেন এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে না পারায় ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীদের তীব্র সমালোচনা করেন।

আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ বছর বয়সী অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে গত মার্চ মাসে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি ফ্লাইটে তোলা হয়। যদিও ২০১৯ সালে অভিবাসন বিষয়ক একজন বিচারক রায় দিয়েছিলেন যে, তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না, কারণ সেখানে স্থানীয় গ্যাংগুলোর দ্বারা তার জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। বিচারক তার আদেশে উল্লেখ করেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পরিবর্তে এল সালভাদরে তার উপস্থিতি, সুস্পষ্ট কারণে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।”

আশ্চর্যের বিষয় হলো, অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তা এবং এমনকি হোয়াইট হাউসও স্বীকার করেছে যে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে “ভুলক্রমে” ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের অবস্থানে অনড় ছিলেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারলাইন লেভিট এই সপ্তাহের শুরুতে জোর দিয়ে বলেন, মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। তিনি এর স্বপক্ষে কিছু অপ্রকাশিত প্রমাণও উল্লেখ করেন।

তবে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাদের মক্কেল যে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য, এমন কোনো প্রমাণ নেই। তাদের মতে, এই অভিযোগটি ২০১৯ সালের একটি গোপন সূত্রের দাবির ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। সূত্রটি দাবি করেছিল, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নিউইয়র্কের গ্যাংয়ের একটি অংশের সদস্য ছিলেন, যেখানে তিনি কখনোই বসবাস করেননি।

শুক্রবার শুনানির সময়, বিচার বিভাগের আইনজীবী ইরেজ রেউভেনি, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে কোন যুক্তিতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল এবং কেন তাকে ফেরত পাঠানো হলো, সেই বিষয়ে বিচারককে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবী সাইমন সান্দোভাল-মোশেনবার্গ ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক টুইট হয়েছে, হোয়াইট হাউসে অনেক প্রেস কনফারেন্স হয়েছে। কিন্তু এল সালভাদর সরকারের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” তিনি আরও যোগ করেন, “একটি ক্ষমা চাওয়া ভালো হতো, তবে আমি তেমনটা আশা করছি না।”

এদিকে, মেরিল্যান্ডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সমাবেশে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা বলেন, এল সালভাদরে পাঠানোর পর থেকে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জেনিফার, সমর্থকদের প্রতি তার স্বামীর জন্য এবং “সেইসব কিলমারদের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান, যাদের গল্প এখনো শোনা যায়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমি সেইসব স্ত্রী, মা ও শিশুদের সঙ্গে আছি, যারা এই ধরনের নিষ্ঠুর বিচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।”

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনকে একটি “আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার বৃদ্ধি করেছে, তবে বিতাড়ন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ বেশিরভাগ মামলাগুলি দীর্ঘকাল ধরে অভিবাসন আদালতে ঝুলে আছে।

মার্চ মাসে, প্রশাসন ১৭৮৯ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার চেষ্টা করে, যা যুদ্ধের সময় বিদেশি নাগরিকদের বিতাড়নের অনুমতি দেয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই আইন ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে খর্ব করে। আদালত একটি মামলার শুনানিতে জানায়, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াসহ এই আইনের অধীনে বিতাড়িত হওয়া ২৩৭ জনের মধ্যে কয়েকজনকে কেবল তাদের শরীরে উল্কি বা লাতিন আমেরিকান গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত পোশাক পরার কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *