মার্কিন বিচার বিভাগে কর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং অসদাচরণ বিষয়ক এক জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টির চিত্র পাওয়া গেলেও, কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে অনীহার বিষয়টি বিশেষভাবে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই জরিপে বিচার বিভাগের কর্মপরিবেশ নিয়ে কর্মীদের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়েছিল।
**জরিপের মূল তথ্য**
জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ তাদের কর্মজীবনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তবে, কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণের শিকার হলে তা কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে কর্মীরা কতটা আগ্রহী, সেই বিষয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী মাত্র ৪২ শতাংশ কর্মী জানিয়েছেন যে, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসদাচরণ দেখলে তা জানাতে আগ্রহী।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়, যেখানে ১৩,৮৯৫ জন কর্মচারী অংশ নেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ২৭২ জন কর্মী কর্মক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে ৬৩ জন জানিয়েছেন, হয়রানির সঙ্গে বিচারকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এছাড়া, প্রায় ৯০০ জন কর্মী কর্মক্ষেত্রে খারাপ আচরণের শিকার হয়েছেন এবং এর পেছনে ১৬৬ জন বিচারকের হাত ছিল।
জরিপে অংশ নেওয়া ২৯০ জন কর্মী কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে ৪৯ জনের অভিযোগের সঙ্গে বিচারকদের নাম জড়িত ছিল।
**অভিযোগ জানাতে অনীহা: কারণ ও বিশ্লেষণ**
জরিপের ফলাফলে কর্মীরা কেন অভিযোগ জানাতে দ্বিধা বোধ করেন, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের কর্মপরিবেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনেক ক্ষেত্রে, কর্মীরা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভয়ে অভিযোগ জানাতে চান না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, বিচারকদের সঙ্গে সম্পর্কিত অসদাচরণের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম।
তবে, কর্মীদের মধ্যে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে দ্বিধা দূর করতে আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা এবং অভিযোগ জানানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
এই বিষয়ে, লিগ্যাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা আলিজা শাটজম্যান সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিচারকের সঙ্গে একজন ক্লার্কের ক্ষমতার পার্থক্য অনেক বেশি থাকে।
কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ক্ষমতা কাঠামো অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
আলাস্কার একজন ফেডারেল বিচারক তাঁর ক্লার্কদের জন্য প্রতিকূল কর্মপরিবেশ তৈরি করেছিলেন।
এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে এক ক্লার্কের সঙ্গে “অনুপযুক্ত যৌন সম্পর্ক”-এর অভিযোগ উঠলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এই ঘটনাটি কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
জরিপের ফলাফলের পর, বিচার বিভাগের কর্মপরিবেশ বিষয়ক একটি বিশেষ দল কর্মীদের মধ্যে অভিযোগ জানানোর আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছে।
কানসাসের ফেডারেল আদালতের বিচারক জুলি রবিনসন বলেন, “আমরা চাই, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ তাঁদের অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করুক।
এর মূল চাবিকাঠি হলো, এই ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি করা।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন