শিরোনাম: জুনকো তাবেই: এভারেস্ট জয়ী প্রথম নারী, যিনি আজও অনেকের কাছে অজানা
১৯৭৫ সালের মে মাস। হিমালয়ের বুকে তখন যেন অন্যরকম এক উত্তেজনা। জাপানি নারী এভারেস্ট অভিযান দলের সদস্যরা আট হাজার মিটারের কাছাকাছি উচ্চতায় তাদের শিবির স্থাপন করেছেন।
তাদের লক্ষ্য, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করা। দলের নেতৃত্বে ছিলেন জুনকো তাবেই। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে, তুষারধসের কবলে পরে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু অদম্য মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের জোরে ফিরে এসেছিলেন তিনি, জয় করেছিলেন এভারেস্টের চূড়া। তিনিই ছিলেন এভারেস্ট জয়ী প্রথম নারী। কিন্তু আজও, অনেক মানুষের কাছেই তিনি এক অজানা নাম।
পর্বতারোহণের জগতে, পুরুষদের আধিপত্যের বিপরীতে, নারীদের সাফল্যের গল্প সবসময়ই কিছুটা চাপা পড়ে যায়। জুনকো তাবেই ছিলেন সেই বিরল দৃষ্টান্ত, যিনি সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভেঙে, নিজের স্বপ্নকে সত্যি করেছিলেন।
তার এই জয়যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। প্রতিকূল পরিবেশ, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং সর্বোপরি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতা – সবকিছুর বিরুদ্ধেই ছিল তার যুদ্ধ।
জুনকো তাবেইয়ের জন্ম ১৯৩৯ সালে, জাপানে। ছোটবেলা থেকেই পাহাড় ভালোবাসতেন তিনি। কৈশোরে প্রথমবার একটি পাহাড়ে আরোহণ করেন।
এরপর, পর্বতারোহণই যেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে, তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জশি-তোহান’ নামের একটি ক্লাব, যেখানে নারীদের পর্বতারোহণে উৎসাহিত করা হতো।
এই ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল, নারীদের নিজেদের উদ্যোগে, আন্তর্জাতিক অভিযানে অংশগ্রহণে সহায়তা করা।
১৯৭৫ সালে, তিনি জাপানি নারী এভারেস্ট অভিযান দলের নেতৃত্ব দেন। সেই অভিযানে, তুষারধসের কারণে গুরুতর আহত হলেও, তিনি ফিরে আসেন এবং ১৬ মে, এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন।
তার এই সাফল্যের পর, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
কিন্তু, সাফল্যের চূড়ায় আরোহণের পরেও, তিনি যেন সবসময়ই কিছুটা উপেক্ষিত ছিলেন। পশ্চিমা বিশ্বে তার এই জয় সেভাবে পরিচিতি লাভ করেনি।
অথচ, তিনি শুধু একজন পর্বতারোহী ছিলেন না, তিনি ছিলেন নারী অধিকার এবং পরিবেশ রক্ষার একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯৮০-এর দশকে, তিনি পরিবেশ দূষণ এবং পর্বতারোহণের কারণে হিমালয়ের পরিবেশের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছিল, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন।
জুনকো তাবেইয়ের এই লড়াই শুধু পর্বত জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, নারীরাও পারে, যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করতে।
তিনি একাধারে মা, স্ত্রী এবং সফল পর্বতারোহী ছিলেন। একদিকে সংসার, অন্যদিকে পাহাড় – দুটো দিক সমানতালে সামলেছেন তিনি।
জুনকো তাবেইয়ের জীবন আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। তিনি দেখিয়ে গেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে, মানুষ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
আমাদের সমাজে, নারীদের এখনো অনেক বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। কর্মক্ষেত্রে, খেলাধুলায় কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে, তাদের প্রতিনিয়ত লড়তে হয় নিজেদের প্রমাণ করার জন্য।
জুনকো তাবেইয়ের গল্প, সেই সব নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা সমাজের প্রচলিত ধারণা ভেঙে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, প্রতিকূলতা যতই আসুক না কেন, নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন