পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সম্ভবনা? বিজ্ঞানীরা দিলেন বড় হুঁশিয়ারি!

গ্রহান্তরের বায়ুমণ্ডলে প্রাণের সন্ধান: বিতর্ক ও নতুন সম্ভাবনা।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি দল দূরবর্তী একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাব্য ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিলেন। সেই ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পরেই, সেই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নতুন গবেষণা বলছে, বিজ্ঞানীরা যে অণুগুলোর সন্ধান পেয়েছেন, সেগুলো সম্ভবত জীবনের চিহ্ন নাও হতে পারে। বরং, এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং ভিনগ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান আরও কঠিন করে তুলেছে।

পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২-১৮বি (K2-18b) নামের একটি গ্রহ নিয়ে এই আলোচনা। এটিকে একটি ‘হাইসিয়ান ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার মানে হলো এটি সম্ভবত হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং তরল জল দ্বারা আবৃত।

বিজ্ঞানীরা এই গ্রহে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (DMDS) নামক দুটি অণুর সন্ধান পেয়েছিলেন, যা পৃথিবীতে সাধারণত জীবন্ত প্রাণী তৈরি করে। এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছিল।

তবে, পরবর্তী গবেষণায় এই দাবির দুর্বলতা ধরা পড়েছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক ড. লুইস ওয়েলব্যাঙ্কস-এর মতে, প্রাথমিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ এবং পরিসংখ্যানগত প্রমাণ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না।

তিনি এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মূল গবেষণায় ব্যবহৃত মডেল এবং ডেটা পরীক্ষা করে ভিন্ন ফলাফল পেয়েছেন। তাদের মতে, ডিএমএস এবং ডিএমডিএস-এর উপস্থিতি জীবনের সুস্পষ্ট প্রমাণ নাও হতে পারে, কারণ এই যৌগগুলো জীবন ছাড়াও অন্যান্য উপায়েও তৈরি হতে পারে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিক্কু মাধুসুধন, যিনি মূল গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁর দল অবশ্য তাঁদের আগের ফলাফলের স্বপক্ষে নতুন করে গবেষণা করেছেন। তাঁরা বলছেন, ডিএমএস এখনও একটি সম্ভাব্য ‘বায়োস future’ বা প্রাণের চিহ্ন বহন করতে পারে।

তবে, তাঁরাও স্বীকার করেছেন যে, এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।

এই বিতর্কের কারণ হলো, মহাকাশ বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের সন্ধান করার সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। উদাহরণস্বরূপ, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহারের পরেও ডেটাতে কিছু ‘নয়েজ’ বা অস্পষ্টতা থাকতে পারে, যা বিশ্লেষণের সময় ভুল ধারণার সৃষ্টি করতে পারে।

তাছাড়া, ডিএমএস-এর মতো জটিল অণু সনাক্ত করা কঠিন, কারণ তাদের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য জৈব অণুর মতোই হতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. রাফায়েল লুক এবং মাইকেল ঝাং, কে২-১৮বি গ্রহের তাপমাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, প্রাথমিক গবেষণায় গ্রহটির তাপমাত্রা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছিল।

এই ধরনের উচ্চ তাপমাত্রা গ্রহের বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। লুক এবং ঝাং-এর দল তাঁদের গবেষণায় অন্যান্য অণু, যেমন ইথেনের সন্ধান পেয়েছেন, যা জীবনের ইঙ্গিত নাও দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, কে২-১৮বি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের অনুসন্ধানে একদিকে যেমন ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, তেমনি বিজ্ঞানচর্চার পদ্ধতি আরও উন্নত হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *