হারানো আশ্রয়: হিন্দু মন্দির বাঁচাতে এক কঠিন সংগ্রাম!

নিউ ইয়র্কের একটি কালী মন্দির, যা “শোনা এবং অদেখা”-দের আশ্রয়স্থল, সেটি রক্ষার জন্য এক কঠিন লড়াই চলছে। কুইন্সে অবস্থিত এই মন্দিরটি মূলত ইন্দো-ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য এক বিশেষ স্থান, যেখানে তাদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান।

ঐতিহ্যবাহী একটি কারখানার ভেতরে গড়ে ওঠা এই মন্দিরে, দক্ষিণ ভারতীয় গ্রাম দেবী মারিয়াম্মান-এর একটি বিশাল মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। কালী দেবীর রূপ মারিয়াম্মান, যিনি সময় ও মৃত্যুর দেবী হিসেবে পরিচিত। মন্দিরের অভ্যন্তরে ধূপের ধোঁয়ায় এক ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা এই স্থানের আধ্যাত্মিকতাকে আরও গভীর করে তোলে।

এখানে নিয়মিতভাবে পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভক্তরা একত্রিত হয়ে তাদের দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু এই মন্দিরটি এখন বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে।

শহরের নিয়ম অনুযায়ী, মন্দিরটিকে উপযুক্ত স্থানে রূপান্তর করতে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারের বেশি খরচ প্রয়োজন। শব্দ দূষণের অভিযোগের কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ। আর্থিক সংকটের কারণে মন্দির কর্তৃপক্ষ এই বিশাল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

এই মন্দিরটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এটি আশ্রয়স্থলও বটে। এখানে নারীদের আশ্রয় দেওয়া হয়, বিশেষ করে যারা সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে আছেন। এমনকি, এই মন্দিরে সমকামীদের বিবাহের ব্যবস্থাও করা হয়, যা অন্যান্য হিন্দু মন্দিরগুলোতে সাধারণত দেখা যায় না।

মন্দিরের পুরোহিত এবং কর্মচারীদের অধিকাংশই নারী, যা এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্যরা জানান, তারা চান এই মন্দিরটি টিকে থাকুক, কারণ এটি তাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই মন্দিরটি তাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তবে, স্থানীয় কিছু মানুষের আপত্তির কারণে মন্দিরটি বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন।

প্রতিবেশীদের অভিযোগের কারণে মন্দির কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বাড়ছে। এমতাবস্থায়, মন্দিরটি রক্ষার জন্য একটি “গোফান্ডমি” (GoFundMe) ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে, যেখানে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় হিন্দু সংগঠন “হিন্দুস ফর হিউম্যান রাইটস”-এর মতো আরও অনেক সংগঠন এই মন্দিরটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন জানাচ্ছে। নিউ ইয়র্কের এই কালী মন্দিরটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও।

এখানে ধর্ম, সংস্কৃতি, এবং মানবতার এক অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়। এই মন্দির রক্ষার লড়াই, অভিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং তাদের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *