কামালা হ্যারিস: আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ‘ভঙ্গুর’, ট্রাম্পের আমলে ‘আত্মসমর্পণে’র সমালোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সম্প্রতি দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না, কারণ তার মতে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ‘ভঙ্গুর’ হয়ে পড়েছে।
হ্যারিস সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, যেখানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যারা গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তাদের ‘আত্মসমর্পণে’র বিষয়টির সমালোচনা করেন।
সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করতেন, যারা একটি ব্যবস্থার পরিবর্তন চান, তাদের শুধু বাইরে থেকে নয়, ভেতরের কাঠামো থেকেও তা করতে হবে। তার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা সেই ধারণাই দেয়।
তবে বর্তমানে তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে তিনি আর সেই কাঠামোর অংশ হতে চান না। তিনি সিবিএস-এর ‘দ্য লেট শো উইথ স্টিফেন কোলবার্ট’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি মনে করি, এখনকার পরিস্থিতিতে আমি আর এই ব্যবস্থার মধ্যে ফিরতে চাই না। আমি দেশ ভ্রমণ করতে চাই, মানুষের কথা শুনতে চাই, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
আমি কোনো ভোট চাওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই না।”
হ্যারিস আরও জানান, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, তার নেতৃত্ব এখন নির্বাচিত কোনো পদে দেখা যাবে না।
সাক্ষাৎকারে হ্যারিস ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নেওয়া কিছু পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।
বিশেষ করে, স্বাস্থ্যখাতে মেডিকেয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতে কাটছাঁট এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে তিনি তার উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি হয়তো অনেক কিছুই অনুমান করতে পারিনি, তবে আমি এটা ভাবিনি যে, আমাদের ব্যবস্থার এবং গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে যারা পরিচিত, তাদের অনেকেই আত্মসমর্পণ করবেন।
এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মনে করি, অনেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নামে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন।”
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, তারা ট্রাম্প সরকারের শিক্ষা বিভাগকে দুর্বল করার চেষ্টা রুখতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আগামী সেপ্টেম্বরে হ্যারিসের একটি বই প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে তিনি তার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। বইটির নাম ‘১০৭ দিন’। সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য হাতে পাওয়া সংক্ষিপ্ত সময়ের কথাও উল্লেখ করেন।
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হ্যারিস বলেন, “এই মুহূর্তে যখন মানুষ হতাশ, ভীত, তখন আমাদের, যারা এখনো এই ধরনের কোনো পদে নেই, তাদের উচিত সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া এবং তাদের নিজেদের ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।”
ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো নেতার নাম জানতে চাইলে হ্যারিস সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, “এখানে অনেকেরই অবদান রয়েছে, তবে আমি যদি কারো নাম উল্লেখ করি, তবে অন্যদের বাদ দেওয়া হবে।
কোনো একক ব্যক্তির কাঁধে সব দায় চাপানোটা ভুল হবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের দায়িত্ব আমাদের সবার।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন