যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত সারা মিলগ্রিম নামের ২৬ বছর বয়সী ওই তরুণীর স্মরণে কানসাসের একটি কমিউনিটিতে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ স্মরণসভা।
গত সপ্তাহে ঘটা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২১শে মে, সারা মিলগ্রিম ও ইয়ারন লিশিনস্কি নামের দূতাবাসের আরেক কর্মী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে একদল তরুণের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। হামলার পরপরই হামলাকারী এলিয়াস রড্রিগেজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় রড্রিগেজ “ফিলিস্তিন মুক্ত হোক” বলে চিৎকার করেন। পরে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, ফিলিস্তিনের জন্য, গাজার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন।
জানা গেছে, ইয়ারন লিশিনস্কি মিলগ্রিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আংটি কিনেছিলেন এবং খুব শীঘ্রই তাদের বাগদান সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
কানসাসের ওভারল্যান্ড পার্কে অবস্থিত বেথ তোরাহ মন্দিরে আয়োজিত স্মরণসভায় নিহত সারা মিলগ্রিমের পরিবারের সদস্য, বন্ধু এবং সহকর্মীরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মিলগ্রিমের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হন বক্তারা।
কানসাস সিটি’র কংগ্রেগেশন কোল আমি’র রাব্বি ডগ আলবার্ট তাঁর বক্তৃতায় মিলগ্রিমের মানবিক গুণাবলির কথা তুলে ধরেন। মিলগ্রিম ছোটবেলায় কিভাবে পশুদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতেন, কিভাবে তিনি নিরামিষভোজী ছিলেন, সে সব স্মৃতিচারণ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মকর্তা সাওয়াসান হাসান বলেন, সারা মিলগ্রিম নারী ও এলজিবিটিকিউ অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সবসময় আগ্রহী ছিলেন। তিনি আরও জানান, মিলগ্রিম ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতেন।
সারা মিলগ্রিম কানসাসের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশবিদ্যা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি শাব্বাত ডিনারে নিয়মিত অংশ নিতেন এবং সেখানকার ইহুদি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল।
স্নাতক হওয়ার পর মিলগ্রিম প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি তরুণদের মধ্যে সংলাপের ওপর কাজ করা একটি সংস্থায় যোগ দেন। তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে ইসরায়েলি দূতাবাসে যোগ দেন।
সেখানে তিনি ইসরায়েল সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী আয়োজনের দায়িত্ব পালন করতেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কানসাস কমিউনিটিতে এক ভয়াবহ ইহুদি বিদ্বেষী হামলায় তিনজন নিহত হয়েছিল।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ জিউইশ উইমেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, শিলা কাটস মিলগ্রিমের নারী অধিকার, এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমরা জানতাম এমন কিছু একটা ঘটতে পারে। তবে, এটা তাঁর সঙ্গে ঘটবে, তা ভাবিনি।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস