কারেন রিডের মামলার পুনরায় বিচার: আগের বারের থেকে কী ভিন্নতা?
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ক্যান্টনে ২০২১ সালের ২৯শে জানুয়ারি, বরফের মধ্যে তার প্রেমিক, পুলিশ অফিসার জন ও’কীফের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত কারেন রিডের বিচার কার্যক্রম নতুন মোড় নিয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো বিচারের মুখোমুখি হওয়া রিডের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো: দ্বিতীয়-ডিগ্রি মার্ডার, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং ঘটনার পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করা।
আগের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিলো ‘ঝুলে যাওয়া জুরি’ এবং ‘মিষ্টি্রায়াল’-এর মাধ্যমে। অর্থাৎ, জুরিদের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে, এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। যদিও অভিযোগগুলো একই— রিড তার গাড়ি দিয়ে ও’কীফকে হত্যা করেছেন এবং পরে তাকে বরফের মধ্যে ফেলে রেখে যান—তবে বিচার প্রক্রিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে।
প্রথমত, উভয় পক্ষের আইনি দলে পরিবর্তন এসেছে। আগের বিচারের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন অ্যাডাম ল্যালি। তবে এবার বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হ্যাঙ্ক ব্রেনান। ব্রেনান কুখ্যাত মাফিয়া ডন জেমস “হোয়াইটি” বুলগারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে কাজ করার জন্য পরিচিত। অপরদিকে, রিডের আইনজীবীদের দলে যুক্ত হয়েছেন রবার্ট অ্যালেসি এবং ভিক্টোরিয়া জর্জ। অ্যালেসি আগে এই মামলায় যুক্ত ছিলেন না, এবং ভিক্টোরিয়া জর্জ প্রথম বিচারের একজন বিকল্প জুরির সদস্য ছিলেন। এই পরিবর্তনগুলো মামলার গতিপথ প্রভাবিত করতে পারে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি হলো, কারেন রিডের মিডিয়া সাক্ষাৎকার। প্রথম বিচারে রিড নিজে কোনো সাক্ষ্য দেননি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এবং ডকুমেন্টারিতে তার মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন। এই সাক্ষাৎকারগুলো এখন প্রমাণ হিসেবে আদালতে পেশ করা হচ্ছে। ব্রেনান তার বক্তব্যে বলেন, “আপনারা তার নিজের মুখ থেকেই শুনবেন তার মদ্যপানের মাত্রা, লেক্সাস গাড়ি চালানোর কথা, জন এর উপর রাগ এবং সম্ভবত, জন-কে আঘাত করার কথা।”
আদালতে ইতিমধ্যে “ডেটলাইন”-এর একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়েছে, যেখানে রিড বলেছিলেন, “আমি হয়তো তাকে আঘাত করিনি, তবে তার হাঁটুতে লেগে সে অক্ষম হয়ে পড়েছিল? আমি জানিনা।”
এই ধরনের মন্তব্যগুলো অন্যান্য সাক্ষীদের কথার সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে তারা রিডকে ও’কীফের মৃত্যুর দিন সকালে বলতে শুনেছিলেন, “আমি কি তাকে আঘাত করেছি?”
এছাড়াও, প্রসিকিউটররা রিডের অন্যান্য সাক্ষাৎকার ব্যবহার করে সাক্ষীদের সমর্থন করছেন এবং আসামীর আইনজীবীদের যুক্তি খণ্ডন করছেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ডকুমেন্টারির ক্লিপে রিডকে বলতে শোনা যায়, “জনের মা এসে আমার দিকে ঝুঁকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, সে গাড়ির ধাক্কা খেয়েছে।” তবে, জনের মা পেগি ও’কীফ আদালতে সাক্ষ্য দেন যে তিনি ঐদিন রিডের সঙ্গে রান্নাঘরে ছিলেন না।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, মামলার প্রধান তদন্তকারী, পুলিশ অফিসার মাইকেল প্রক্টরের অপসারণ। প্রথম বিচারে প্রক্টর, রিড সম্পর্কে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন, যা তার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিভাগীয় নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। আইনজীবীরা বলছেন, প্রক্টর মিথ্যা বলেছেন এবং মামলার প্রমাণ তৈরি করেছেন।
আদালতে প্রক্টরের সাক্ষ্য নেওয়া হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে, তাকে সম্ভাব্য সাক্ষীদের তালিকায় রাখা হয়েছে। এই সমস্ত পরিবর্তন মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন