ক্যারেন রিড মামলার চূড়ান্ত শুনানি: সাক্ষী কারা, কী বলছেন?

ক্যারেন রিডের বহুল আলোচিত মামলার পুনবিচার প্রায় শেষের দিকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার প্রেমিক পুলিশ অফিসার জন ও’কীকে হত্যা করেছেন।

এই মামলার সাক্ষী এবং তাদের জবানবন্দিগুলোই মূলত নির্ধারণ করবে, এই মামলার ভবিষ্যৎ। খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর সূত্রে জানা গেছে।

২০২২ সালের ২৯শে জানুয়ারির রাতের ঘটনা। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যানটনে একটি বাড়ির বাইরে, রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে কি ঘটেছিল, তা নিয়েই যত বিতর্ক।

সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, মদ্যপ অবস্থায় কারেন रीड তার লেক্সাস এসইউভি দিয়ে জন ও’কীকে চাপা দেন এবং তুষারের মধ্যে ফেলে রেখে যান, যার ফলে তার মৃত্যু হয়।

তবে, কারেন রিডের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, ও’কীফকে অন্য কেউ হত্যা করেছে এবং রিডকে ফাঁসানো হয়েছে।

পুলিশের তদন্তেও তারা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন।

এই মামলায় দ্বিতীয়-ডিগ্রি হত্যা, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার অভিযোগ আনা হয়েছে কারেন রিডের বিরুদ্ধে।

প্রথমে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।

মামলার শুনানিতে উভয়পক্ষ থেকে প্রায় ৪৯ জন সাক্ষী আনা হয়েছিল।

এদের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।

তাদের সাক্ষ্য মূলত একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে: ২০১৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি, ভোররাতের দিকে ক্যানটনের ৩৪ ফেয়ারভিউ রোডের বাড়ির বাইরে আসলে কি ঘটেছিল?

কারেন রিড অবশ্য আদালতে কোনো সাক্ষ্য দেননি।

তবে, কৌঁসুলিরা তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে কিছু অংশ আদালতের শুনানিতে পেশ করেন।

যেখানে রিডকে বলতে শোনা যায়, “আমি তাকে আঘাত করেছি বলে মনে করি না, তবে আমি কি তাকে সামান্য ছুঁয়েছিলাম?”

আরেকটি সাক্ষাৎকারে, রিড জোর দিয়ে বলেন, তার গাড়ি জন ও’কীফের গায়ে লাগেনি।

তিনি আরও বলেন, “আমি আমার গাড়ি দিয়ে জন’কে ধাক্কা মারিনি।

আমার গাড়ির আঘাতে জন’এর কোনো ক্ষতি হয়নি।”

এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন জেনিফার ম্যাককেব।

ঘটনার শুরু থেকে ও’কীফের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার দিন বন্ধুদের সাথে একটি বারে দেখা হয় তাদের।

এরপর তারা সবাই একত্র হয়ে ৩১ ফেয়ারভিউ রোডের একটি বাড়িতে যান।

ম্যাককেবের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন তিনি রিড ও ও’কীকে ফেয়ারভিউ রোডের ওই বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি ও’কীকে রাস্তা খুঁজে পেতে সাহায্যও করেছিলেন।

ম্যাককেব জানান, তিনি সেখানে রিডের এসইউভি দেখতে পান, কিন্তু তারা দু’জন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেননি।

পরের দিন সকালে, রিডের একটি ফোনকলে ম্যাককেবের ঘুম ভাঙে।

রিডকে তিনি খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন।

ম্যাককেব জানান, তিনি ও’কীফের খোঁজে প্রথমে তার বাড়িতে যান, পরে ফেয়ারভিউ রোডে ফিরে আসেন, যেখানে তারা ও’কীকে তুষারের মধ্যে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান।

এরপর তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন।

আদালতে ম্যাককেব বলেন, “আমি তখনই বুঝেছিলাম জন… জন মারা গেছে।”

ম্যাককেবের ভাষ্যমতে, রিড প্রথম সারির এক জরুরি কর্মীকে বলেছিলেন, “আমি তাকে আঘাত করেছি, আমি তাকে আঘাত করেছি।”

অন্যান্য সাক্ষীরাও একই কথা বলেছেন।

তবে, জেরা করার সময়, রিডের আইনজীবী অ্যালান জ্যাকসন ম্যাককেবের পরিবারের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ম্যাককেব তার বক্তব্য সাজিয়েছেন এবং অন্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন।

ম্যাককেব অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন কেরি রবার্টস।

তিনিও ছিলেন ও’কীফের বন্ধু।

রবার্টস জানান, ঘটনার দিন সকালে রিডের ফোন পেয়ে তিনি ও’কীফের খোঁজে বের হন।

তিনি ম্যাককেবের বাড়ির সামনে রিডের গাড়ির পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান।

রবার্টসের ভাষ্যমতে, তিনি তখন রিড ও ম্যাককেবের মধ্যে কথোপকথন শোনেন, যেখানে রিড তার গাড়ির লাইটের ক্ষতির কথা বলছিলেন।

তবে, জেরা করার সময়, জ্যাকসন একটি ভিডিও দেখান, যেখানে রবার্টসের বর্ণনার সঙ্গে ঘটনার সময়ের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রবার্টস স্বীকার করেন, তিনি সম্ভবত সময়ের ব্যাপারে ভুল বলেছিলেন।

তদন্তের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মাইকেল প্রক্টর নামের এক তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কারেন রিডের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

আদালতে জমা দেওয়া টেক্সট মেসেজগুলোতে প্রক্টরকে রিডকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।

এই কারণে, প্রক্টরকে রাজ্য পুলিশ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে কৌঁসুলিরা জোর দিয়ে বলেন, প্রক্টরের এই বার্তাগুলো তার কোনো অসদাচরণের প্রমাণ নয়।

অন্যদিকে, ঘটনার রাতে জন ও’কীফের সঙ্গে কারেন রিডের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপও শুনানো হয়।

সেখানে তাদের মধ্যে ঝগড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এই মামলার তদন্তে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, ও’কীফের মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল এবং অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

তবে, আঘাতের ধরন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যায়।

কেউ বলছেন, এটি গাড়ির আঘাতের ফল।

আবার কেউ বলছেন, আঘাতগুলো সম্ভবত কুকুরের কামড়ের কারণে হয়েছে।

ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতে, ও’কীফের মোবাইল ফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘটনার দিন রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে তিনি ফেয়ারভিউ রোডের কাছাকাছি ছিলেন।

এরপর তার ফোনটি সেখানেই ছিল।

আরেকজন বিশেষজ্ঞের মতে, রিডের গাড়ির ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘটনার সময় তার গাড়ি ব্যাক গিয়ারে ছিল এবং ঘণ্টায় প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বেগে চলছিল।

তবে, ঘটনার পুনর্গঠন নিয়ে আসা বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

কেউ বলছেন, ও’কীফের আঘাত রিডের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

আবার কেউ বলছেন, গাড়ির আঘাতে তার এই ধরনের আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

মামলার চূড়ান্ত ফলাফল এখনো আসেনি।

তবে, সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং মামলার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই এই মামলার একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *