কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর হামলা: ভয়ঙ্কর ঘটনার আসল কারণ!

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও কঠিন হওয়ার শঙ্কা।

জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার পাহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। গত ২৫ বছরের মধ্যে পর্যটকদের ওপর চালানো এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।

এই ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিক ছাড়াও একজন নেপালী নাগরিকও রয়েছেন। জানা গেছে নিহতদের মধ্যে নববিবাহিত এক ভারতীয় নৌসেনা কর্মকর্তাও ছিলেন।

হামলার পরপরই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দ্রুত কাশ্মীর গিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরে আসেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন।

পাহেলগাম, যা কাশ্মীর উপত্যকার একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, সেখানে এই হামলা চালানো হয়। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী একটি বন থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

হামলায় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।

এই হামলার দায় স্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন। ধারণা করা হয়, এটি পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা।

বিবৃতিতে কাশ্মীরে ভারতীয় নাগরিকদের বসবাসের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিকে হামলার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। ২০১৯ সালে ভারতীয় সরকার এই রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এবং এটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে।

এরপর থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতীয় নাগরিকদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া শুরু হয়।

এই ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।

কারণ, পাকিস্তানের অস্থির পরিস্থিতি ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তবে, এই ঘটনার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের ঘটনা কাশ্মীরের অর্থনীতি এবং শান্তি-প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

পর্যটন এখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জিডিপিতে প্রায় ৭ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে পর্যটনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতেও কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৫ সালে পাহেলগামে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কয়েকজন বিদেশি পর্যটকে অপহরণ করে, যাদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছিলেন।

২০০০ সালে পাহেলগামে এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন হিন্দু তীর্থযাত্রী।

এই ঘটনার জেরে সেখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে কাশ্মীর উপত্যকার শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *