যুদ্ধ বিরতির পরও কাশ্মীর: সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ কারা?

যুদ্ধবিরতির পরেও কাশ্মীর: আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা

শ্রীনগর, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর — কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিলেও সেখানকার মানুষের মনে এখনো গভীর উদ্বেগ। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সেখানকার জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি এবং আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ভয় এখনো কাটেনি।

জম্মু-কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর শ্রীনগরের ফতেহ কাদাল এলাকার বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী হাজিরা জানালেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও তার মনে শান্তি নেই। নিজের পরিবারের জন্য সরকারি ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, যুদ্ধের কারণে আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন।

পাকিস্তানের দিক থেকে আসা ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কাশ্মীরে বসবাস করা মানুষদের জীবন প্রায় চার দশক ধরে এই ধরনের সংঘর্ষের ছায়া দেখে আসছে। ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে এখানকার পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে।

২০১৯ সালে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয় এবং বহু মানুষকে বন্দী করা হয়। এর মধ্যে, ২০২২ সালের এপ্রিলে পাহালগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই, কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন শহরে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোন ভূপাতিত করার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকেন।

শ্রীনগরের ২৪ বছর বয়সী তরুণ হাসনাইন শাহির বলেন, “আমি আগে কখনো এত ভয় পাইনি। যুদ্ধের পূর্বাভাস যদি এমন হয়, তাহলে যুদ্ধ কেমন হবে, জানি না।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে গোলাগুলি চলেছে। সেখানকার বাসিন্দারা এখনো পর্যন্ত তাঁদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেননি।

উরির বাসিন্দা সুলেমান শেখ জানান, তাঁর দাদা সবসময় তাঁদের বোফর্স গোলন্দাজ বন্দুকের কথা বলতেন। তাঁর মতে, ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময় এই বন্দুকের আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। সুলেমান বলেন, “যদি আবার এই বন্দুকের আওয়াজ শোনা যায়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাফর চৌধুরী মনে করেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। তিনি বলেন, “জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের জন্য সুখকর হবে না।

কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেখানকার মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক নূর আহমদ বাবা বলেন, “কাশ্মীরিরা নিজেদের অপমানিত মনে করেন। তাঁদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানো হয়নি। তাই তাঁদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

কাশ্মীরের এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ফারকান বলেন, “যুদ্ধটা আসলে কাদের ক্ষতি করলো? আমাদের। বিশ্বের চোখে আমরা যেন কেবলই ‘ক্ষতিগ্রস্ত’।

শ্রীনগরের ২৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মুনিব মেহরাজ বলেন, “যুদ্ধ হয়তো শেষ হয়েছে, যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর ফল আবারও কাশ্মীরিদেরই ভোগ করতে হচ্ছে—জীবনহানি, ঘরবাড়ি ধ্বংস, শান্তির অবসান। কত দিন ধরে এই চক্র চলবে?”

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *