কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল) বরাবর গোলাগুলি বিনিময় করেছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার আহ্বানের পরেও।
সম্প্রতি, বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হওয়া একটি প্রাণঘাতী হামলার জেরে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কাশ্মীর উপত্যকার একটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা ভারতের কাছে হামলার প্রমাণ চেয়েছে এবং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাদের সার্বভৌমত্ব বা জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে, তারা উপযুক্ত জবাব দেবে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে, তবে এতে বেসামরিক লোকজনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানি বাহিনীর ছোট অস্ত্রের হামলার জবাব দিয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী শ্রীনগরে গেছেন। এরই মধ্যে ভারত সরকার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
এছাড়া, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
উত্তেজনা কমাতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা উভয় সরকারকে সর্বোচ্চ সহনশীলতা প্রদর্শনের জন্য এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত।”
এদিকে, ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে এবং সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। নয়াদিল্লি কাশ্মীর হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এর জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশই সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। ভারত এরই মধ্যে আকাশ ও নৌ মহড়া শুরু করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, সিন্ধু নদীর জল সরবরাহ বন্ধ করার যেকোনো চেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।
১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে।
বর্তমানে, এই অঞ্চলের কিছু অংশ ভারত এবং কিছু অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান