২০ বছরের তরুণীর মৃত্যু: শোকের ছায়া, অভিবাসন অভিযানে চাঞ্চল্য!

শীতের এক গভীর রাতে, ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের আরবানা শহরে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন ২০ বছর বয়সী কেটি আব্রাহাম। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এক অবৈধ অভিবাসীর বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনি।

এই ঘটনার শোক এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) কেটির স্মরণে ‘অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ’ নামে একটি অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরু করেছে।

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৯শে জানুয়ারী, রাত ২টার দিকে কেটি এবং তার বন্ধু ক্লো পোলজিন সহ আরও কয়েকজন বন্ধু একটি লাল আলোতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটি দ্রুত গতির এসইউভি তাদের গাড়ির পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কেটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরের দিন ক্লো পোলজিন-এরও মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, গাড়িচালক ছিলেন ২৯ বছর বয়সী, গুয়াতেমালার নাগরিক জুলিয়ো কুকুল-বোল।

তিনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন এবং নিজের পরিচয় গোপন করতে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করেছিলেন।

এই ঘটনার আট মাস পর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ “অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ” ঘোষণা করে।

এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল শিকাগো এবং ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে বসবাস করা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ইলিনয়ের ‘স্যাংচুয়ারি সিটি’ নীতিমালার সুযোগ নিয়ে এসব অভিবাসী এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

“স্যাংচুয়ারি সিটি” বলতে এমন শহর বা এলাকাকে বোঝানো হয় যেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমিত সহযোগিতা করে।

কেটি আব্রাহামের বাবা জো আব্রাহাম এই ঘটনার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন সরকার তার মেয়েকে রক্ষা করতে “মর্মান্তিকভাবে” ব্যর্থ হয়েছে এবং রাজ্য সরকারও তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনাকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি।

জো আব্রাহাম এর মতে, অবৈধ অভিবাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে। তিনি অভিবাসন নীতি কঠোর করার এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে উপযুক্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানান।

দুর্ঘটনার পর, জুলিয়ো কুকুল-বোল-কে প্রথমে টেক্সাস থেকে মেক্সিকোর দিকে যাওয়া একটি বাসে করে পালাতে দেখা যায়।

পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, মদ্যপান করে গাড়ি চালানো এবং মৃত্যুর কারণ হওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া, জাল কাগজপত্র দিয়ে পরিচয় গোপন করার অভিযোগেও তার বিচার চলছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও, অনেকে মনে করেন, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল।

ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার এই অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, এর মাধ্যমে বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা হচ্ছে।

কেটি আব্রাহামের মৃত্যু একদিকে যেমন একটি পরিবারের জন্য গভীর শোকের কারণ, তেমনিভাবে এটি অভিবাসন নীতি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিতর্ককে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *