নোবেলজয়ী সাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরো: নিজের উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নে ন্যাগাসাকির স্মৃতি।
কাজুও ইশিগুরো, যিনি স্মৃতি, সময় এবং আত্ম-প্রবঞ্চনার গল্পকার হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘এ পেল ভিউ অফ হিলস’-এর চলচ্চিত্র রূপান্তর নিয়ে কথা বলেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জাপানের ন্যাগাসাকিতে জন্ম নেওয়া লেখকের এই উপন্যাস, তাঁর নিজের জীবনের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে।
ইশিগুরো জানিয়েছেন, তাঁর মা সবসময়ই তাঁর উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ন্যাগাসাকির কথা বলতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ভয়াবহতা, তাঁর মায়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—এসব কিছুই যেন লেখকের লেখায় নতুন রূপ পেয়েছে।
উপন্যাসের মূল চরিত্র এৎসুকা, যিনি ইংল্যান্ডে বসবাস করেন এবং তাঁর অতীতের স্মৃতি তাঁকে সবসময় তাড়া করে ফেরে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র নিকি, একজন তরুণ লেখক, যিনি এৎসুকার জীবন নিয়ে প্রশ্ন করেন।
ইশিগুরো মনে করেন, নিকি চরিত্রটি তাঁর লেখার প্রতিচ্ছবি।
ক্যামেরার সামনে নিকির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ-জাপানি অভিনেত্রী ক্যামিলা আইকো।
ক্যামিলার মতে, তাঁর নিজের মিশ্র সংস্কৃতি থাকার কারণে, তিনি জাপানি কিংবা ব্রিটিশ—কাউকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। ইশিগুরো জানান, এই ছবিতে নিকির কৌতূহল, মায়ের থেকে স্মৃতিগুলো বের করে আনার চেষ্টা—এসব কিছুতে তিনি নিজেকে খুঁজে পান।
উপন্যাসটি মূলত মা ও মেয়ের সম্পর্ক, যুদ্ধ, উদ্বাস্তু জীবন এবং স্মৃতির জটিলতা নিয়ে বোনা হয়েছে।
ইশিগুরো মনে করেন, চলচ্চিত্রায়নের ফলে গল্পটি নতুন রূপ পায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
তাঁর মতে, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উচিত মূল গল্পের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পরিবর্তে, নিজেদের মতো করে গল্পটিকে উপস্থাপন করা।
ইশিগুরো তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাস, যেমন ‘দ্য রিমেইন্স অফ দ্য ডে’, ‘নেভার লেট মি গো’-এর চলচ্চিত্রায়নের উদাহরণ টেনে বলেন, ভালো চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালকের হাতে পড়লে, একটি উপন্যাস কীভাবে নতুন জীবন পায়।
তিনি মনে করেন, একটি ভালো চলচ্চিত্র, গল্পের মূল ভাবনাকে অক্ষুণ্ণ রেখে দর্শকদের আরও গভীরে নিয়ে যেতে পারে।
উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র—এই যাত্রাপথে গল্পগুলো যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, মানুষের কাছে পৌঁছে যায় নতুন রূপে।
কাজুও ইশিগুরোর মতে, তাঁর গল্পগুলোও যেন কালের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, বিভিন্ন প্রজন্মের কাছে নতুন বার্তা নিয়ে আসে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান