ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ: স্টারমারকে রুখতে কী পদক্ষেপ?

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের হুমকির মুখে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে খবর, যুক্তরাজ্য সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যের প্রধান রপ্তানি পণ্য, যেমন – গাড়ি, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমারকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি যুক্তরাজ্যের ওপর এই ধরনের শুল্ক আরোপ করে, তবে এর ফলস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এর ফলে যুক্তরাজ্যের রাজস্ব খাতেও বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের প্রায় ৯.৯ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেইর স্টারমার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি হয়তো এখনই প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। তবে অনেক কূটনীতিক মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্টারমারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে, ট্রাম্প এই কৌশল বারবার ব্যবহার করতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির পদক্ষেপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কার্নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর নির্ভরযোগ্য অংশীদার নয়। কানাডার এই পদক্ষেপ তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক রাষ্ট্রদূত কিম ডারোচ মনে করেন, স্টারমারের উচিত কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। তিনি আরও বলেন, শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাজ্যের গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ক্ষতি হলে, ডিজিটাল ট্যাক্স কমানোর মতো ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন ট্রাম্প কোনো সুবিধা না পান।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হলে, তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ফলে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে এই ধরনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *