প্রতি বছর মে মাসের প্রথম শনিবার, আমেরিকার কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলের চার্চিল ডাউন্স-এ বসে এক বর্ণাঢ্য আয়োজন – কেন্টাকি ডার্বি। ঘোড়দৌড়ের এই ঐতিহ্যপূর্ণ আসর শুধু খেলাধুলার জন্য নয়, ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাছেও এটি একটি বিশেষ আকর্ষণ।
১৫১ বছর ধরে চলা এই প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে থাকে বাহারি টুপি, যা এর ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
কেন্টাকি ডার্বি, “দ্য রান ফর দ্য রোজেস” নামেও পরিচিত, এটি আমেরিকান ঘোড়দৌড়ের ট্রিপল ক্রাউনের প্রথম ধাপ। কর্নেল মেরিওয়েদার লুইস ক্লার্ক জুনিয়র, যিনি ইউরোপ ভ্রমণের সময় অভিজাত রেসট্র্যাকগুলি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তিনিই এই প্রতিযোগিতার জন্ম দেন।
১৮৭৫ সালে প্রথম কেন্টাকি ডার্বি অনুষ্ঠিত হয়, যা আমেরিকান ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকাল ধরে চলমান খেলাধুলার আসর। সেই বছর অলিভার লুইস নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ জকি অ্যারিসটাইড নামক ঘোড়ার ওপর চড়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম দিকে ১৫ জন জকির মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান।
ডার্বির আকর্ষণ শুধু ঘোড়দৌড় নয়, এর আভিজাত্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ক্লার্ক এবং তাঁর স্ত্রী মেরি, যিনি ছিলেন একজন সমাজকর্মী, এই ডার্বিকে সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মিলনমেলায় পরিণত করেন।
এই অনুষ্ঠানে আসা মানুষের পরিপাটি পোশাক ও নজরকাড়া টুপি এই আয়োজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। স্থানীয় সংবাদপত্রে কে কী পোশাক পরে এসেছেন, তার একটি তালিকাও ছাপা হতো।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টুপি ছিল ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের সাথে সাথে, টুপিগুলি বিশেষ অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে ডার্বির জন্য একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়।
টেলিভিশনের যুগে, যখন এই প্রতিযোগিতা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে, তখন মহিলাদের মধ্যে আরও উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় টুপি পরার প্রবণতা বাড়ে।
আজকের দিনে, কেন্টাকি ডার্বির টুপি ফ্যাশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক মহিলা অস্ট্রেলিয়ার রেসিং ট্র্যাক থেকে শুরু করে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের ফ্যাশন অনুসরণ করেন।
ডিজনার টুপি বিক্রেতা রাচেল বেল জানান, রাজপরিবারের সদস্য, বিশেষ করে কেট মিডলটন এবং মেগান মার্কেলের মতো ব্যক্তিত্বদের টুপিগুলি তাঁদের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
তাঁদের স্টাইল অনুসরণ করে অনেক গ্রাহক ফ্যাশন সচেতন হন এবং টুপি বা ফ্যাসিনেটর-এর মতো আকর্ষণীয় হেডগিয়ার পরতে পছন্দ করেন।
আসলে, টুপি মানুষের জীবনে বহু পুরোনো একটি অনুষঙ্গ। মানুষ কমপক্ষে ২৭,০০০ বছর ধরে টুপি পরে আসছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর ব্যবহার ভিন্ন।
শীতকালে উষ্ণ থাকার জন্য তুর্কমেনিস্তানের রাখালেরা শaggy তেলপেক টুপি পরতেন, আবার ফ্রান্সের ব্রিটানিতে মহিলারা পরতেন লেইসের টুপি।
ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর ৭০ বছরের বেশি রাজত্বকালে ৫,০০০ এর বেশি টুপি পরেছেন। রানীর এই টুপি-প্রীতি তাঁকে ফ্যাশন জগতে এক বিশেষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
এমনকি, রানি কোন রঙের টুপি পরবেন, তা নিয়েও বাজি ধরা হতো। ২০০৭ সালে কেন্টাকি ডার্বিতে রানী সবুজ ও কোরাল রঙের টুপি পরে সকলের নজর কেড়েছিলেন।
কেন্টাকি ডার্বি যেন শুধু একটি ঘোড়দৌড় নয়, বরং এটি ফ্যাশন, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক দারুণ মিশ্রণ। এখানে ঘোড়ার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায় টুপি, যা এই আয়োজনকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক