কেনিয়ার জনগণ: রুটির শাসনের অবসান চায়!

**কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট রুটির বিরুদ্ধে ফুঁসছে জনতা: প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, দুর্নীতি ও সহিংসতার অভিযোগ**

আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটের বিরুদ্ধে ক্রমশ বাড়ছে অসন্তোষ। ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রুটের সরকারে বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগগুলো হলো— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা, দুর্নীতি, এবং পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক ব্লগারের মৃত্যু।

২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রুটে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্য ‘হাজলার নেশন’ (গরীব ও সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি) ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তিনি পুরনো প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষ করে ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে রুটের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নতুন কর আরোপের সিদ্ধান্ত ছিল সাধারণ মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

যদিও রুটের দাবি, সরকারের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এই কর বৃদ্ধি অপরিহার্য ছিল।

গত বছর রুটের এই ট্যাক্স নীতির প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেন।

সেই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত হয়। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেওয়ারও চেষ্টা করে।

রুতের সরকার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি।

সম্প্রতি পুলিশের হেফাজতে এক ব্লগারের মৃত্যু নতুন করে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেক কেনিয়াবাসী মনে করেন, এই ঘটনা দেশটির খারাপ শাসনের একটি উদাহরণ, যেখানে প্রেসিডেন্ট আইনসভা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, রুটের এখন জনগণের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সম্ভবত তিনি এখন কেনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৭ সাল পর্যন্ত রুট ক্ষমতায় থাকতে পারেন। তবে তরুণ সমাজ, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং অন্যদের আন্দোলনের কারণে সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

বিক্ষোভকারীরা সরকারের দুর্নীতি দূর করতে চান, যা সরকারি সম্পদের অপব্যবহার এবং রাজনীতিবিদদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত।

বিক্ষোভকারীরা রুটকে ‘যাকো’ (বাইবেলের একজন কর আদায়কারীর প্রতিরূপ) এবং ‘মউজি’ (স্বাহিলি ভাষায় ‘চোর’) বলেও অভিহিত করছেন।

এছাড়াও, কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়ার একটি চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হওয়ায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়েছে।

এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং রুটের জনগণের কথা শোনার অনীহার প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন।

তাঁদের মতে, এই সংস্কারের ফলে গরিব মানুষের ক্ষতি হবে, সুবিধা হবে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় রুট বলেছেন, তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাঁর যদি দেশ না থাকে, তাহলে অন্যদেরও একই পরিণতি হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রুটের এই ধরনের বক্তব্যই তাঁর প্রতি অনেকের ভয়ের কারণ। এর আগে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুটে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

রুট এমন ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা এবং তাঁর ওপর জনগণের আস্থা কমে যাওয়ায় অনেকে মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে কেনিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *