বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর: ম্যান সিটির কেরোলিন!

**কেরোলিন নিকোলি: বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার**

ফুটবল বিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে খেলোয়াড়রা সবসময়ই কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। তাদেরই একজন, ব্রাজিলের তরুণ ফুটবলার কেরোলিন নিকোলি, যিনি বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটি মহিলা দলের হয়ে খেলছেন।

বিশ্বসেরা হওয়ার এক অদম্য স্বপ্ন নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন, মাঠের খেলায় যার প্রতিফলন প্রায়ই দেখা যায়। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স তারই প্রমাণ।

জানুয়ারিতে নর্থ ক্যারোলিনা কারেজ থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন কেরোলিন। এরপর থেকেই তিনি নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাচ্ছেন।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় সিটি, যেখানে কেরোলিনের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি একটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন এবং পুরো ম্যাচ জুড়েই চেলসির রক্ষণভাগের জন্য ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

এই ম্যাচের পরেই তিনি জানান, “আমি খুবই খুশি। পুরো দল ভালো খেলেছে, এবং আমাদের সবার দিনটা ভালো ছিল, তাই আমার জন্য বিষয়টি সহজ ছিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো বিশেষ রাতে শান্ত থাকা।”

তবে, একজন খেলোয়াড় হিসেবে কেরোলিন শুধু একটি অ্যাসিস্টেই থেমে থাকতে চান না। তিনি আরও বড় কিছু করতে চান।

চেলসির বিরুদ্ধে ২-১ গোলে হারের ম্যাচেও তিনি গোল করেন। মাঠের লড়াইয়ে তার এই দৃঢ়তা এবং একাগ্রতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

কেরোলিনের ইউরোপে আসার মূল কারণ ছিল নিজেকে আরও বড় পরিসরে মেলে ধরা। তিনি বলেন, “আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়া এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমি জানি, ইউরোপে খেললে বিশ্বজুড়ে আমার পরিচিতি বাড়বে, কারণ ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার জেতা খেলোয়াড়দের প্রায় সবাই হয় ইংল্যান্ডে খেলে, না হয় স্পেনে।

জীবন তো স্বপ্নের জন্যই, তাই আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানানোর উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি।”

২০২৩ সালে নর্থ ক্যারোলিনা কারেজের হয়ে খেলার সময় কেরোলিন ন্যাশনাল উইমেন্স সকার লিগের (NWSL) সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর পরপরই তিনি হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান, যার ফলে মাঠের বাইরে থাকতে হয় অনেক দিন।

এরপর তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলে ফিরে আসেন এবং ২০২৪ সালের অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জেতেন।

কেরোলিন জানান, “আমি যখন আমেরিকায় ছিলাম, তখন দ্বিতীয়বার ইউরোপে আসার আগে সেখানে আরও এক বছর খেলার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু সিটি’র খেলার ধরন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাদের খেলার স্টাইল অনেকটা আমার আগের ক্লাবের মতোই।

সেখানকার কোচও সিটি’র খেলার ধরনের ভক্ত ছিলেন। বলা যায়, এই কারণে এখানে মানিয়ে নিতে আমার সুবিধা হয়েছে।”

ম্যানচেস্টারে আসার পর মাঠের বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে কেরোলিনকে। এখানকার ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে তার বেশ সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, “শুরুতে এটা আমার জন্য কঠিন ছিল। ব্রাজিলে ট্রেনিংয়ে ডাক পেলে মনে হতো, এখনই যেন আকাশে আগুন জ্বালাই।

আমি ভেবেছিলাম, আমি প্রস্তুত, কারণ আমেরিকাতেও তো ঠান্ডা থাকে। কিন্তু ম্যানচেস্টারের মতো ঠান্ডা তো সেখানে ছিল না। এখানে খুব ঠান্ডা, তবে আমি আমার লক্ষ্যে অবিচল থাকতে চাই।”

ইংল্যান্ডে আসার পর কেরোলিন অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন। মাঠের বাইরের ঘটনাগুলোও তাকে স্পর্শ করেছে।

তার সতীর্থ খাদিজা শ’কে একটি ম্যাচের পর বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়। এই ঘটনায় কেরোলিন তাকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। আমি উপলব্ধি করেছি, যারা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করে, তারা হয়তো জানে না আমি কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আবার তারাই আমার প্রশংসা করতেও দ্বিধা করবে না।

তাই আমি ঠিক করি, তাদের কথাকে গুরুত্ব দেব না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোচ, আমরা এবং আমাদের দল হিসেবে আমরা কেমন আছি, সেটা জানা। একজন খেলোয়াড় হিসেবে সবসময় পারফেক্ট থাকা সম্ভব নয়। এটা বোঝার পর আমার জন্য সবকিছু সহজ হয়ে যায়।”

২০২৭ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারী বিশ্বকাপ।

কেরোলিন চান, তার দেশ যেন মাঠ ও মাঠের বাইরে সফল হয়। তিনি বলেন, “ব্রাজিলের ফুটবল মানেই প্রতিভা। বাইরের জগৎ থেকে যখন কেউ আমাদের সম্পর্কে জানতে চায়, তারা আমাদের উৎসব, পার্টি, এসবের কথা জানতে চায়।

তবে, ব্রাজিলে এসে আমাদের সংস্কৃতি দেখলে তাদের ধারণা পাল্টে যাবে। ব্রাজিল শুধু প্রতিভার দেশ নয়, খাবারের দিক থেকেও সেরা।

আমার মনে হয়, বিশ্বকাপে অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়রা যখন ব্রাজিলে আসবে, তখন তারা আমাদের সংস্কৃতিকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করবে।”

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *