“আস্তে খাও, ধীরে বাঁচো”- স্বাস্থ্যকর জীবনের মন্ত্র!
ঢাকা, [আজকের তারিখ]। ব্যস্ত এই যুগে, সময় যেন সোনার মতোই মূল্যবান। সকালে অফিসের তাড়া, বিকেলে মিটিং, আর রাতে পরিবারের জন্য সময় বের করা – এই দৌড়ঝাঁপের মাঝে খাবার খাওয়ার যেন কোনো ফুসরত নেই।
অনেক সময় দেখা যায়, আমরা এতটাই তাড়াহুড়ো করে খাই যে, খাবারটা পেটে যাওয়ার পরে এর ভালো-মন্দ কিছুই টের পাই না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর বিহেভিয়র্যাল হেলথের বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ বলেন, “আমাদের পাকস্থলী মস্তিষ্ককে বোঝাতে প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় নেয় যে পেট ভরে গেছে। দ্রুত খাবার খেলে এই সংকেত পাওয়ার আগেই আমরা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি।”
ফলে, অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, দ্রুত খাবার খেলে হজমের সমস্যাও হতে পারে। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়।
খাবার দ্রুত গিলে ফেললে তা শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, দ্রুত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে বেশি বাতাস প্রবেশ করে, যা পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে, কিভাবে এই দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা সম্ভব।
- **মনোযোগ দিন:** খাবার খাওয়ার সময় টেলিভিশন দেখা বা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত না থেকে খাবারের দিকে মনোযোগ দিন। এতে আপনি খাবারের স্বাদ ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারবেন।
- **ধীর গতিতে খান:** খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান। একটি কামড় খাওয়ার পর ধীরে ধীরে চিবিয়ে অন্য কামড় নিন। ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হেলেন ম্যাকার্থির মতে, “প্রতিটি গ্রাস ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে খাওয়ার গতি কমে যায়।”
- **অন্যান্য কৌশল:** খাবার খাওয়ার সময় অন্যমনস্কতা কমাতে নিজের বাম হাতে খাবার খান। খাবার পরিবেশনের সময় চামচ বা কাঁটাচামচের বদলে অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। খাবারের মাঝে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন এবং জল পান করুন।
খাবার খাওয়ার ধরনের ওপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ফাস্ট ফুড দ্রুত খাওয়া যায়, কারণ সেগুলোর গঠন নরম থাকে এবং চিবানোর তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার ধীরে চিবিয়ে খেতে হয়।
আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার চল রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে বসে সময় নিয়ে খাবার খেলে, খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। বাইরের খাবার বা ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্তি কমিয়ে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
সুতরাং, সুস্থ থাকতে হলে খাবারের দিকে মনোযোগ দিন, ধীরে খান এবং জীবনকে উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, “আস্তে খাও, ধীরে বাঁচো” – এই মন্ত্রটি শুধু একটি স্বাস্থ্য টিপস নয়, এটি সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস