ইউরোপে আবারও মঞ্চস্থ হচ্ছে মডেস মুসোর্গস্কির বিখ্যাত রুশীয় অপেরা ‘খোভানশ্চিনা’। উনিশ শতকে লেখা এই অপেরার বিষয়বস্তু সপ্তদশ শতকের রাশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতা দখলের লড়াই। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা যেন আরও গভীর হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের নাট্যনির্মাতারা তাই এই অপেরাকে নতুন আঙ্গিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরছেন। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে।
‘খোভানশ্চিনা’ অপেরার গল্পে দেখা যায়, জার শাসিত রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণির ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা, বিদেশি প্রভাব এবং পুরাতনপন্থী সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব। এই প্রেক্ষাপট বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দর্শকের কাছে নতুন করে আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।
বার্লিনের একটি অপেরা হাউসে সম্প্রতি ‘খোভানশ্চিনা’র মঞ্চায়নে আধুনিক রাশিয়ার প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখানে বর্তমান ক্রেমলিনকে তুলে ধরা হয়েছে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেনেভার একটি প্রযোজনায় সপ্তদশ শতকের একজন লেখকের চরিত্রকে দেখানো হয়েছে আধুনিক হ্যাকারের রূপে। বিশাল পর্দায় রুশীয় কোডিংয়ের দৃশ্য এবং রাজনৈতিক বিতর্কের ভিডিও প্রদর্শিত হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে আগামী সপ্তাহে ‘খোভানশ্চিনা’র আরেকটি নতুন পরিবেশনা শুরু হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ পরিচালক সাইমন ম্যাকবার্নি তাঁর এই প্রযোজনাকে বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করছেন।
ম্যাকবার্নি জানিয়েছেন, এই অপেরাটি নিছক ঐতিহাসিক ঘটনার পুনর্নির্মাণ নয়, বরং আজকের দিনের প্রতিচ্ছবি। তাঁর মতে, অপেরাটি একইসঙ্গে “ভয়ঙ্কর সুন্দর”।
জানা গেছে, এই পরিবেশনার ধারণার ওপর প্রভাব রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভাষণের। এমনকি শুরুতে তিনি মস্কোর বলশয় থিয়েটারে এই অপেরাটি মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
তবে, রাশিয়াতে ‘খোভানশ্চিনা’র মঞ্চায়ন এখনো পুরনো ধাঁচে হচ্ছে। যদিও অপেরার গল্পে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা আধুনিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা সম্ভব।
সালজবার্গ অপেরার পরিচালক এসা-পেকা সালোনেন মনে করেন, “যদি নাটকের কয়েকটি চরিত্র ও নামের পরিবর্তন করা হতো, তবে এটিকে বর্তমান ঘটনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে মনে হতো।”
তবে, সব অপেরা হাউজ রাশিয়ান ক্লাসিক পরিবেশনার পক্ষে নয়। পোলিশ ন্যাশনাল অপেরা ২০২২ সালের মার্চ মাসে মুসোর্গস্কির আরেকটি কাজ ‘বরিস গডুনভ’-এর মঞ্চায়ন বাতিল করে দেয়।
কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তারা ইউক্রেনের জনগণের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিল। যদিও ইউরোপের পশ্চিমা দেশগুলোতে রুশীয় অপেরার মঞ্চায়নে তেমন কোনো দ্বিধা দেখা যায়নি।
আগামী বছর প্যারিসে চায়েকোভস্কির ‘ইউজিন ওয়ানজিন’ পরিচালনা করতে যাচ্ছেন র্যালফ ফাইনেস।
আর্দ্রাম-এ আসন্ন ‘বরিস গডুনভ’-এর পরিচালক কিরিল Серебреникভ। তিনি তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রযোজনা তৈরি করছেন।
২০১৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি মস্কোর অন্যতম সফল থিয়েটারের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বলশয় থিয়েটারে বেশ কয়েকটি অপেরা প্রযোজনা করেছেন।
পরিচালক সাইমন ম্যাকবার্নি মনে করেন, ‘খোভানশ্চিনা’র গল্পে এমন কিছু বিষয় আছে যা সর্বজনীন। এই অপেরার মাধ্যমে মানুষ ইতিহাসের একটি নতুন ধারণা লাভ করে।
তাই এই সময়ে দাঁড়িয়ে যখন বড় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তখন এই অপেরা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান