খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার অভিজ্ঞতা: এক লেখকের যাত্রা!

ব্রিটিশ লেখিকা লামোর্না অ্যাশের খ্রিস্টধর্মের অনুসন্ধিৎসা: এক বছরের যাত্রাপথ

উত্তর লন্ডনের একটি ছোট্ট ঘর থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা, যাঁর গন্তব্য ছিল সুদূর স্কটল্যান্ডের একটি নির্জন দ্বীপ—লামোর্না অ্যাশের এই অভিজ্ঞতা যেন এক ভিন্ন স্বাদের গল্প। কৌতুহল থেকেই এই অনুসন্ধানের শুরু।

তাঁর পরিচিত দুজন বন্ধু, পেশায় ছিলেন কমেডিয়ান, হঠাৎ করেই খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিয়ে পুরোহিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনা নাড়া দেয় লামোর্নাকে।

তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, একজন মানুষ কীভাবে এত গভীরভাবে একটি বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, তিনি নিজেই এক বছরের জন্য খ্রিস্টধর্মের পথে যাত্রা শুরু করেন।

তাঁর এই অনুসন্ধিৎসা ছিল গভীর ও বিস্তৃত। বিভিন্ন চার্চে যাওয়া থেকে শুরু করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে তাদের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখা—সব কিছুই করেছেন তিনি।

ক্যাথলিক, অর্থোডক্স খ্রিস্টান, কোয়েকার, পেন্টেকোস্টাল, অ্যাংলিকান—বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের জীবন ও বিশ্বাসের গল্প শুনেছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে এই বিশ্বাসগুলো মানুষের জীবনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।

এই যাত্রাপথে লামোর্না অ্যাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলোর একটি ছিল স্কটল্যান্ডের আয়োনা দ্বীপে কাটানো সময়। এক সময় এই দ্বীপটি ছিল স্কটল্যান্ডে খ্রিস্টধর্মের প্রথম প্রবেশদ্বার।

সেখানকার নির্জন পরিবেশে তিনি গভীর এক শান্তি অনুভব করেন। প্রার্থনা সভাগুলোতে যোগ দেওয়া, বাইবেল পাঠ করা—এসবের মাধ্যমে তিনি যেন এক নতুন উপলব্ধির সন্ধান পান।

তাঁর ভাষায়, “আমি যেন আমার ভেতরের সব গ্লানি থেকে মুক্তি পাচ্ছিলাম।

আয়োনায় কাটানো দিনগুলো তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেখানকার প্রকৃতির নীরবতা, প্রার্থনার গভীরতা, আর মানুষের আন্তরিকতা—সবকিছু মিলেমিশে তৈরি হয়েছিল এক ভিন্ন জগৎ।

তিনি অনুভব করেন, “আমি যেন নতুন করে বাঁচতে শিখেছি।

তবে, এই দীর্ঘ যাত্রার শেষে লামোর্না অ্যাশ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। তিনি হয়তো সরাসরি খ্রিস্টান হননি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেক দিয়েছে।

তাঁর ভাষায়, “আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি, তবে এই যাত্রাটা ছিল অসাধারণ। এখন আমার মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহস।

তাঁর এই যাত্রা শুধু একটি ধর্মের প্রতি আগ্রহের গল্প নয়, বরং এটি মানুষের জীবনের গভীরতা এবং উপলব্ধির এক অনন্য চিত্র। বিশ্বাসের পথে হেঁটে একজন মানুষ কীভাবে নিজের ভেতরের জগৎকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারে, লামোর্না অ্যাশের অভিজ্ঞতা তারই প্রমাণ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *