বিখ্যাত লেখিকা কাইলি রিডের নতুন উপন্যাস ‘কাম অ্যান্ড গেট ইট’-এ কিভাবে সমাজের ভেদাভেদ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেই বিষয়ে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর লেখার প্রক্রিয়া, সমাজের বিভিন্ন দিক এবং সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলেছেন।
আর্কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসে সমাজের ধনী-গরিব, শ্রেণী ও বর্ণ বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
কাইলি রিড বর্তমানে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং খুব শীঘ্রই তাঁর স্বামী ও মেয়ের সাথে নেদারল্যান্ডসে পাড়ি জমাতে চলেছেন।
বর্তমানে তিনি ২০২৩ সালের বুকার পুরস্কারের বিচারকদের একজন।
উপন্যাসটি লেখার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাইলি রিড জানান, তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনযাত্রা তাঁকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
তাঁদের চিন্তা-ভাবনা, কথা বলার ধরন তাঁকে মুগ্ধ করে।
সেই সময়ে তাঁর স্বামী “পেইং ফর দ্য পার্টি: হাউ কলেজ মেইনটেইনস ইনইকুয়ালিটি” নামে একটি বই উপহার দেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
রিড বলেন, “টাকা-পয়সা আমাকে সব সময়ই আকর্ষণ করে।
আমি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করি এবং এভাবেই উপন্যাসের ধারণা জন্ম নেয়।”
তাঁর আগের উপন্যাস ‘সাচ আ ফান এজ’-এও অর্থের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যদিও বইটি মূলত বর্ণবাদের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হয়েছিল।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর অনেক কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী তাঁদের কাজের মাধ্যমে বর্ণবাদ দূর করার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু কাইলি রিডের মতে, “বর্ণবাদ থেকে অর্থকে আলাদা করা সম্ভব নয়।
কারণ, দাসত্বের কারণেই কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর গড় আয় এত কম।
আমি মনে করি, শুধু কিছু জিনিস কিনে বর্ণবাদ দূর করা যায় না।”
উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ মুহূর্ত তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “আমি কখনোই আগে থেকে ঠিক করে নিই না যে, পুঁজিবাদ অথবা নারীবাদের ওপর লিখব।
বরং, কারো বলা কোনো কথা আমার মনে গেঁথে যায়, যা আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করে।
গল্পের শুরুটা এমনই হয়।”
কাহিনীর চরিত্রগুলোর কণ্ঠস্বর ফুটিয়ে তোলার বিষয়ে তিনি বেশ পারদর্শী।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা তিনি তাঁর লেখায় ব্যবহার করেন।
যেমন, একবার এক তরুণী জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর বাবার ডেন্টাল অফিস থেকে “অনুশীলনের জন্য” চেক পান।
এই বিষয়টি তাঁর উপন্যাসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
কাইলি রিড তাঁর চরিত্রগুলোর দুর্বলতাগুলোও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমার পছন্দের বিষয় হলো, যখন কোনো চরিত্র ভালো-মন্দ জানে, কিন্তু তারপরও ভুল করে।
এমন চরিত্রগুলো আমাকে নাড়া দেয়, কারণ বাস্তবেও এমনটা ঘটে।”
নেদারল্যান্ডসে তাঁর তৃতীয় উপন্যাস লেখার অভিজ্ঞতা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাকে দ্রুত ডাচ ভাষা শিখতে হবে!”
ভাষা শেখার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “যখন আমি ‘সাচ আ ফান এজ’ লিখছিলাম, তখন সপ্তাহে চার দিন জার্মান ভাষার ক্লাস করতাম।
সকালে কোনো কিছুতে খারাপ হওয়ার একটা সুযোগ ছিল, যা আমাকে লেখার সময় চাপমুক্ত রাখত।”
বুকার পুরস্কারের বিচারক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, “বিচারকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই ভালো।
তবে, কিছু বই আমাকে মুগ্ধ করেছে, যা বিচার করা কঠিন করে তুলেছে।”
নিজের সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জেমস Baldwin-এর লেখার প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা জানান।
জেমস Baldwin-এর “দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম”, “নোটস অফ আ নেটিভ সন” এবং “অ্যানাদার কান্ট্রি” তাঁর প্রিয় বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ছোটবেলায় আমি ৪০ বছর বয়সের মধ্যে যা যা করতে চেয়েছিলাম, তার একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম।
তার মধ্যে ‘একটি ফুটবল খেলায় একটি ছেলেকে চুমু খাওয়া’-র পাশাপাশি ‘একটি বই প্রকাশ করা’-র মতো বিষয় ছিল।
আমি খুশি যে, আমি সেই তালিকা প্রায় পূরণ করতে পেরেছি।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান