যুক্তরাষ্ট্র ও এল সালভাদরের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের শিকার হওয়া এক ব্যক্তির গল্প এখন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আলোচনার বিষয়। কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের এই ব্যক্তি, যিনি একসময়gang violence-এর শিকার হয়ে নিজের দেশ এল সালভাদর থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, বর্তমানে তার জীবন নিয়ে চলছে এক জটিল আইনি লড়াই।
অভিবাসন বিষয়ক জটিলতার কারণে তাকে ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয় এবং সেখানে কারাগারে বন্দী করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ নামের একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য এবং একজন সন্ত্রাসী। তারা তার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে। অন্যদিকে, গার্সিয়ার পরিবার তাকে একজন পরিশ্রমী ও ভালো মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যিনি পরিবারের জন্য সবসময় নিবেদিত ছিলেন।
তার স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমার স্বামীর জীবন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এল সালভাদর সরকার যেন রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তার স্ত্রীর উপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। তবে, গার্সিয়ার পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আদালতের নথি ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া একসময় এল সালভাদরের একটি মধ্যবিত্ত এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে তার পরিবার একটি ব্যবসা চালাতো।
কিশোর বয়সে গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করত এবং জীবননাশের হুমকি দিত। জীবন বাঁচানোর তাগিদে পরিবারটি পরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে তার গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পুলিশ জানায়, তাকে একটি মাদক মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর তাকে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে গ্যাং সদস্যতার অভিযোগ আনা হয়।
আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানানো হলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে, পরে বিচারক তার পক্ষে রায় দেন এবং তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বিচারক তার সাক্ষ্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখনও অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার গ্যাং সদস্যতার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা তার শরীরে থাকা কিছু ট্যাটু এবং ২০১৯ সালের গ্রেপ্তারের সময় তার পরিহিত একটি টুপিকে প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছে।
যদিও গ্যাং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঐ চিহ্নগুলো এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্যতার প্রমাণ নয়।
বর্তমানে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এল সালভাদরের একটি কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তার মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যরা এখনো আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই ঘটনার সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি এবং এল সালভাদরের গ্যাং-সংক্রান্ত সহিংসতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন