কানাডায় ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম সরকারি সফর, যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন ক্যামিলা তাদের প্রথম সরকারি সফরে বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। ২০২২ সালে রাজা হওয়ার পর এটি তাদের প্রথম কানাডা সফর। সংক্ষিপ্ত হলেও, এই সফরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা যাচ্ছে।
এই সফরের প্রধান আকর্ষণ হলো, মঙ্গলবার কানাডার সিনেটে রাজার ভাষণ। সাধারণত এটিকে ‘সিংহাসন থেকে ভাষণ’ (Speech from the Throne) বলা হয়। এই ভাষণটি মূলত পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে দেওয়া হয় এবং এটি রাজার পক্ষ থেকে গভর্নর জেনারেল দিয়ে থাকেন। তবে, রাজার এই ভাষণটি কোনো নতুন আইন প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভাষণে কানাডার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ঐক্যের বার্তা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কানাডার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজার এই ভাষণ একটি বিশেষ ঘটনা, কারণ এর মাধ্যমে সরাসরি রাজার বক্তব্য শোনার সুযোগ পান কানাডার নাগরিকরা। এছাড়াও, এই ভাষণ রাজার প্রতি সম্মান জানানো এবং কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর ভূমিকা আরও একবার নিশ্চিত করে। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের পর এই প্রথম কোনো ব্রিটিশ রাজা সরাসরি কানাডার পার্লামেন্টে ভাষণ দিচ্ছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, এই ভাষণে কানাডার সরকার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। এর মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক স্থাপন করা, যা জীবনযাত্রার খরচ কমাবে এবং জনজীবনকে আরও নিরাপদ করবে।
এই সফরটি মূলত দুই দিনের জন্য। এরই মধ্যে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
কানাডা একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এর অর্থ হলো, দেশটির আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাজা। যদিও রাজার পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক, তবে কানাডার রাজনৈতিক কাঠামোতে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজার হয়ে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন গভর্নর জেনারেল, যিনি ফেডারেল পর্যায়ে রাজার প্রতিনিধিত্ব করেন।
ঐতিহাসিকভাবে, কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাজতন্ত্রের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, অনেক ঐতিহাসিক চুক্তি সরাসরি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছিল, কানাডা সরকারের সঙ্গে নয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে, রাজার এই সফরকে কানাডার সার্বভৌমত্ব এবং সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ফ্রেজার ভ্যালির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বারবারা মেসামোরের মতে, ট্রাম্পের এমন কিছু মন্তব্য ছিল যা কানাডার মানুষের কাছে ‘গভীরভাবে আপত্তিকর’ ছিল। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, এটি বিশ্বকে দেখানোর একটি ভালো সুযোগ যে আমরা একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং আমরা সেভাবেই থাকতে চাই। অবশ্যই, আমরা আমাদের আমেরিকান বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্য দিই, তবে আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না।
কানাডার রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন হতে পারে, তবে এটি দেশটির রাজনৈতিক এবং আইনি কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা