কানাডায় বাদশাহ চার্লসের ঐতিহাসিক ভাষণ: কূটনৈতিক দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কানাডার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বাদশাহ তৃতীয় চার্লস যে ভাষণ দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, কানাডার স্বাধীনতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক বিষয়ক বক্তব্যে কূটনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ভাষণে তিনি ফরাসি এবং ইংরেজি – উভয় ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন, যা কানাডার দ্বি-ভাষিক সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
গত ২৭শে মে অটোয়াতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাদশাহ ও রানি ক্যামিলা যোগদান করেন। সেখানে দেওয়া ভাষণে বাদশাহ চার্লস, কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্ব এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতার বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়লাভের প্রেক্ষাপটে বাদশাহের এই ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কারণ, কার্নির বিজয়কে অনেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার ধারণার প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখছেন।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাদশাহ চার্লস অত্যন্ত সফলভাবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাবেক প্রেস সচিব আইলসা অ্যান্ডারসন বলেন, “ভাষণটি সম্ভবত সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছিল, তবে বাদশাহ ব্যক্তিগত কিছু বিষয় যোগ করেছেন, যা খুবই প্রশংসনীয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কানাডা ছিল এমন একটি দেশ, যেখানে বাদশাহ সবার আগে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সফরটি পিছিয়ে যায়। তবে তিনি এর আগে ১৯ বার প্রিন্স অব ওয়েলস হিসেবে কানাডা সফর করেছেন, তাই দেশটি সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদশাহ চার্লস তাঁর ভাষণে কানাডার স্বাধীনতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত সুকৌশলে তুলে ধরেছেন। ভাষণে তিনি কানাডার জাতীয় সঙ্গীত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের দৃঢ়তা ও স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, বাদশাহের এই ভাষণ ছিল “নিখুঁত”। তাঁরা মনে করেন, এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন। বাদশাহের ভাষণে কানাডার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, ট্রাম্পের ‘কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য’ করার মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাদশাহের এই ভাষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এর মাধ্যমে বাদশাহ চার্লস কানাডার স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে দেশটির গভীর সম্পর্ককে আরও একবার তুলে ধরেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ভাষণ প্রমাণ করে, কঠিন সময়েও রাজতন্ত্র কীভাবে একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ হিসেবে কাজ করতে পারে।
সাধারণত, কানাডার গভর্নর জেনারেল রাজার পক্ষ থেকে ভাষণ দেন এবং সরকারের নীতি তুলে ধরেন। তবে, এই বছর বাদশাহ চার্লস নিজে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে, তাঁর মা, প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, একবার এই কাজটি করেছিলেন। বাদশাহ চার্লসের এই ভাষণ তাঁর কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার প্রমাণ এবং কানাডার প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
তথ্যসূত্র: পিপলস।