কানাডার পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস: যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্কের নতুন দিগন্ত।
কানাডার রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন তৃতীয় চার্লস। গত ২৭শে মে, অটোয়ায় অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কানাডার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন।
রাজা চার্লসের এই সফরটি ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত, প্রায় ২৪ ঘণ্টার। রাণী ক্যামিলাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এই সফরে রাজা ও রাণীকে ঐতিহ্যপূর্ণ শোভাযাত্রা সহকারে সিনেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের সম্মান জানাতে গার্ড অব অনার-এর একটি দল উপস্থিত ছিল।
ভাষণে রাজা চার্লস বিশেষভাবে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। তিনি উল্লেখ করেন, উভয় দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভাষণে রাজা চার্লস কানাডার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, কানাডা এমন একটি দেশ, যা বিশ্বের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সরবরাহ করতে পারে এবং বিশ্ব যে মূল্যবোধকে সম্মান করে, কানাডা সেই মূল্যবোধ ধারণ করে।
তিনি আরও যোগ করেন, কানাডা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অবাধ বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে বিশ্বাসী দেশগুলোর সঙ্গে জোট গঠনে প্রস্তুত।
ঐতিহ্য অনুসারে, সাধারণত কানাডার গভর্নর জেনারেল পার্লামেন্টে ভাষণ দেন। তবে রাজার এই ভাষণটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে, ১৯৫৭ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একবার এমন ভাষণ দিয়েছিলেন।
ভাষণে রাজা চার্লস উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অনেক পরিবর্তন দেখেছে। সেই সময়ে কানাডা একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল এবং শান্তির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
ভাষণে কানাডার অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন রাজা। তিনি বলেন, কানাডা তার মূল্যবোধের প্রতি অবিচল থেকে নতুন মিত্রতা তৈরি করতে পারে এবং এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারে, যা সকল কানাডিয়ানের উপকারে আসবে।
পার্লামেন্ট অধিবেশনের পর, রাজা চার্লস ও রাণী ক্যামিলা ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে যান এবং অজানা সৈনিকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সফরের শেষ আনুষ্ঠানিকতা ছিল এটি।
এই সফরের পাশাপাশি, প্রিন্স হ্যারি, যিনি বর্তমানে তাঁর পরিবার থেকে আলাদা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তিনি চীনের সাংহাইয়ে একটি ভ্রমণ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজা তৃতীয় চার্লসের এই সফর কানাডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে আরও সুসংহত করবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।