ব্রেক্সিটের পর প্রথম: ম্যাক্রনকে স্বাগত জানালেন রাজা চার্লস!

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ব্রিটেন সফর: ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের বার্তা।

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে এটি কোনো ইউরোপীয় নেতার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।

এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করা। বর্তমানে যখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জটিল সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তখন দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার উইন্ডসর ক্যাসলে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজা চার্লস ও কুইন ক্যামিলার সঙ্গে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন ও তাঁর স্ত্রী। সেখানে রাজা চার্লস দুদেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, “বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে আমরা একসঙ্গে এইসব জটিলতার মোকাবিলা করব।” দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কথাও তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ফ্রান্সের অসাধারণ অর্জন ও সাফল্যের প্রতিও তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতের ভোজসভায় রাজা এই মন্তব্য করেন। এর আগে, লন্ডনের কাছে রয়্যাল এয়ার ফোর্স নর্থল্টে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে স্বাগত জানান প্রিন্স ও প্রিন্সেস অফ ওয়েলস।

এরপর তাঁরা সবাই উইন্ডসর ক্যাসেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, যেখানে তাঁদের জন্য রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

২০০৮ সালের পর এই প্রথম কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরে এসেছেন। এই সফর উপলক্ষে ব্রিটেনের ঐতিহ্যপূর্ণ আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে।

উইন্ডসরের রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে তাঁদের ক্যাসলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ফরাসি ও ব্রিটিশ জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অন্যান্য রাজ পরিবারের সদস্যরাও যোগ দেন।

বুধবার ম্যাক্রন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ‘আননোন ওয়ারিয়রের’ সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং পার্লামেন্টের রয়েল গ্যালারিতে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

এই সফরের সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

উভয় নেতা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা,Channel পার হয়ে অবৈধ অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আগামী বৃহস্পতিবার ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউক্রেনকে সমর্থন জানানোও দুই নেতার আলোচনার প্রধান বিষয়। তাঁরা ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিষয়ে তাঁদের ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ এর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। উল্লেখ্য, মার্চ মাসে এই ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠিত হয়েছিল।

এছাড়াও, তাঁরা উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের একটি সামরিক ঘাঁটিতেও যাবেন। সেখানে ইউক্রেনকে সমর্থন যোগানোর জন্য গঠিত দেশগুলির একটি দলের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন।

উভয় নেতাই বর্তমানে নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। জনমত জরিপে তাঁদের জনপ্রিয়তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে এই সফর তাঁদের জন্য কিছুটা হলেও রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও ইউক্রেন সংক্রান্ত বড় ধরনের চুক্তি অথবা অভিবাসন সমস্যা নিরসনে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপের সম্ভাবনা কম, তবুও এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে, এমনটাই আশা করা যায়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *