আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অলিম্পিক সাঁতারু ক্রিস্টিন কোভেন্ট্রি। আগামী ২৪ জুন তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট থমাস বাখের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
ক্রীড়া জগতের সর্বোচ্চ আসনে একজন আফ্রিকান নারীর আগমন নিঃসন্দেহে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
ক্রিস্টিন কোভেন্ট্রির এই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি জিম্বাবুয়ের ক্রীড়া, শিল্প ও বিনোদন মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
সেসময় দেশটির মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন একমাত্র শ্বেতাঙ্গ প্রতিনিধি। সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের শাসনামলে কোভেন্ট্রিকে ‘সোনার মেয়ে’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। একজন ক্রীড়াবিদ এবং একইসাথে দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি থাকার কারণে, এই দায়িত্ব তিনি প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি।
মন্ত্রী হিসেবে কোভেন্ট্রির মেয়াদ বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, যিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত।
তবে কোভেন্ট্রি এসব বিতর্ক এড়িয়ে নিজের মন্ত্রকের প্রতি প্রেসিডেন্টের সমর্থনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের ফুটবল ফেডারেশনকে (জিফা) দুর্নীতি ও নারী রেফারিদের যৌন হয়রানির অভিযোগে নিষিদ্ধ করা।
ফিফা এই সিদ্ধান্তের কারণে জিম্বাবুয়েকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করার হুমকি দিলেও, কোভেন্ট্রি ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি। প্রেসিডেন্ট নানগাগওয়ার সমর্থন ছিল তাঁর সঙ্গে।
আমি কয়েকজন নারী রেফারির সঙ্গে কথা বলেছি, যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। জিফার কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই সঠিক ছিল। এর ফলস্বরূপ ১৮ মাস ধরে আমাদের অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে, তবে আমি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আমি কৃতজ্ঞ যে প্রেসিডেন্ট আমার পাশে ছিলেন এবং আমাদের নারীদের সম্মান রক্ষা করেছেন।
অবশেষে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ফিফা জিফার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করে। বর্তমানে জিফা নির্বাচন সম্পন্ন করেছে এবং তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
তবে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের অভাবে জিম্বাবুয়ে এখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারছে না।
কোভেন্ট্রির এই সাফল্যের দিনে, জিম্বাবুয়ে দল প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় বেনিনের বিপক্ষে একটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলেছিল। প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী ডেভিড কোল্টার এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে দলটি নিজেদের মাঠে খেলতে পারছে না।
খেলাধুলার এই দুরবস্থা সত্যিই হতাশাজনক।” যদিও পরে তিনি কোভেন্ট্রিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি আশা করি তিনি এই নতুন দায়িত্বে সততার সঙ্গে কাজ করবেন।
আফ্রিকার ক্রীড়াঙ্গনে কোভেন্ট্রির এই সাফল্যে আনন্দিত বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা। আফ্রিকার ফুটবল কনফেডারেশন থেকে শুরু করে আফ্রিকান ইউনিয়ন পর্যন্ত, সবাই কোভেন্ট্রিকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
কোভেন্ট্রি তাঁর প্রচারণার ভিত্তি হিসেবে ‘উবুন্টু’ দর্শনকে তুলে ধরেছেন, যার অর্থ “আমি আছি, কারণ আমরা আছি”।
এই দর্শনের মাধ্যমে তিনি আইওসিতে একটি সমন্বিত এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চান। তিনি বলেন, “আমরা যদি সম্মিলিতভাবে একটি টেকসই উপায়ে আন্দোলনের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে আমরা আরও শক্তিশালী হব।
ক্রীড়াবিদ হিসেবে কোভেন্ট্রির অর্জন ঈর্ষণীয়। তিনি ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকিংয়ে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।
অলিম্পিক স্কলারশিপ নিয়ে তিনি অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্টে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। খেলা ছাড়ার পর তিনি হারারেতে একটি সাঁতারের একাডেমি গড়ে তোলেন।
জিম্বাবুয়ের রাজনীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং একজন খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা কোভেন্ট্রিকে নতুন এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিন আগে, তাঁর বাবা-মায়ের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে, যেখানে তাঁর অলিম্পিক পোশাকও চুরি হয়।
কোভেন্ট্রি বর্তমানে জিম্বাবুয়েতে ফিরে এসেছেন এবং কয়েক দিনের ছুটি উপভোগ করছেন। আগামী তিন মাস তিনি তাঁর পরিবারকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের লুজানে বসবাস করবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান