আতঙ্ক! কিশোরদের সহিংস আচরণের কারণ কি আমরাই?

নতুন নেটফ্লিক্স (Netflix) সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence)-এর সূত্র ধরে কিশোরদের মধ্যে অনলাইনে নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের (misogyny) উদ্বেগ বাড়ছে। এই সিরিজে কিশোরদের মধ্যে নারীবিদ্বেষী মানসিকতা এবং এর প্রভাব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মানসিকতা শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর গল্পে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের নারীবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে সহপাঠীকে হত্যার ঘটনা দেখানো হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এক ডিটেকটিভ জানতে পারেন, অনলাইনে কিশোরদের কার্যকলাপ এবং তাদের মধ্যেকার কথোপকথন অনেক সময়ই অভিভাবকদের অজানা থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে না পারলে কিশোরদের মানসিকতা বোঝা কঠিন।

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরদের মধ্যে নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এমনকি, অল্প বয়সী ছেলেদের মধ্যেও এই ধরনের আচরণ দেখা যাচ্ছে।

অনেক শিক্ষক মনে করেন, অনলাইনে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির (influencer) প্রভাবে কিশোররা নারীদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ একটি ‘নৈতিক আতঙ্ক’ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মতে, এখনই যদি এই বিষয়ে সচেতন না হওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে এর ফল ভয়াবহ হতে পারে।

শুধু তাই নয়, অনেক শিক্ষক মনে করেন, বিদ্যালয়ে লিঙ্গ-সংবেদনশীল শিক্ষা (gender equity training) এবং কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শুধু অনলাইন জগৎ বা সামাজিক মাধ্যমকে (social media) দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ, কিশোরদের মধ্যে নারীবিদ্বেষী মনোভাব অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান।

পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থা—সবাইকে মিলেই এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য (mental health) এবং তাদের প্রতি উপযুক্ত মনোযোগ দেওয়াটাও জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যালয়ে ‘সম্মানজনক সম্পর্ক’ বিষয়ক শিক্ষা (respectful relationships education) চালু করা দরকার, যেখানে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।

এই ধরনের শিক্ষা কিশোরদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, সমাজে নারীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।

অ্যাডোলেসেন্স-এর মতো সিরিজগুলো সমাজের এই দিকটি তুলে ধরে। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কিশোরদের মানসিকতার ওপর প্রযুক্তির প্রভাব এবং সেই বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা কতটা জরুরি।

এই সমস্যা সমাধানে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *