এক সময়ের খ্যাতি সম্পন্ন অস্ট্রিয়ান চিত্রশিল্পী গুস্তাভ ক্লিমটের আঁকা একটি হারিয়ে যাওয়া ছবি সম্প্রতি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৯৩০ এর দশক থেকে ছবিটির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঘানার একজন রাজার প্রতিকৃতি এটি। প্রিন্স উইলিয়াম নিই নর্টে ডাউওনার এই ছবিটি ১৮৯৭ সালে আঁকা হয়েছিল।
ছবিটিতে দেখা যায়, প্রিন্সকে প্রোফাইলে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তাঁর পেছনের অংশে ফুলের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দুই ফুটের কিছু বেশি উচ্চতার এই ছবিটি বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের টিইএএফএএফ (TEFAF) মাএস্ট্রিচট আর্ট ফেয়ারে ভিয়েনিজ গ্যালারি উইনারোইথার অ্যান্ড কোহলাবাখার (ডব্লিউঅ্যান্ডকে) প্রদর্শন করছে।
ছবিটির দাম ধরা হয়েছে ১৫ মিলিয়ন ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার সমান।
গ্যালারির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে দুইজন সংগ্রাহক তাদের সাথে যোগাযোগ করে ছবিটি হস্তান্তর করেন। সেই সময়ে ছবিটির ওপর ক্লিমটের একটি “এস্টেট স্ট্যাম্প” ছিল, যা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না।
ছবিটির সত্যতা যাচাই করেন শিল্পকলার ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ওয়েডিঙ্গার। তিনি গত দুই দশক ধরে এই ছবিটির খোঁজ করছিলেন।
জানা যায়, ১৯২৩ সালে ক্লিমটের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে ছবিটি নিলামে তোলা হয়। এরপর ১৯২৮ সালে আর্নেস্টাইন ক্লেইন নামের এক নারীর কাছে এটি প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হয়।
আর্নেস্টাইন ও তাঁর স্বামী ফেলিক্স ক্লিমটের স্টুডিওকে একটি ভিলাতে রূপান্তর করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৩৮ সালে এই ইহুদি দম্পতি ভিয়েনা ছেড়ে মোনাকোতে পালিয়ে যান।
এরপর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছবিটির আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ব্যাপক সংস্কার এবং ক্লেইনের উত্তরাধিকারীদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ছবিটি আবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গ্যালারি ডব্লিউঅ্যান্ডকে জানিয়েছে, ক্লিমট ১৮৯৭ সালের ভিয়েনা ভলকেরশাউ (Völkerschau) প্রদর্শনী চলাকালীন এই ছবিটি এঁকেছিলেন।
ভলকেরশাউ ছিল উনিশ ও বিশ শতকে ইউরোপে জনপ্রিয় হওয়া জাতিগত প্রদর্শনী। ওয়েডিঙ্গারের গবেষণায় জানা গেছে, প্রিন্স যেখানকার অধিবাসী ছিলেন, সেই ওসু থেকে অনেক মানুষ ভিয়েনায় প্রদর্শিত হতে এসেছিলেন।
সম্ভবত ক্লিমট ছবিটি তৈরির জন্য একটি কমিশন পেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি শিল্পীর কাছেই ছিল।
ক্লিমটের শৈলীতে পরিবর্তন প্রসঙ্গে ওয়েডিঙ্গার জানান, এই ছবিতে অলঙ্করণ উপাদান যুক্ত হয়েছে, যা তাঁর পরবর্তী কাজের বৈশিষ্ট্য।
ক্লিমট তাঁর “দ্য কিস” চিত্রের জন্য আজও বিশেষভাবে পরিচিত। এই চিত্রকর্মটি দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভিয়েনার বেলভেডিয়ার জাদুঘরে ভিড় করেন।
এছাড়া, ২০২৩ সালে তাঁর আঁকা “পোর্ট্রেট অফ ফ্রাউলাইন লিজার” নামের একটি ছবি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। এই ছবিটি ছিল কোনো নারীর প্রতিকৃতি এবং এটি ইউরোপীয় নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি শিল্পকর্মের স্বীকৃতি লাভ করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন