কোডাক: ধ্বংসের মুখে ইতিহাসের সাক্ষী, বন্ধ হতে পারে?

ফটোগ্রাফি জগতের এক সময়ের প্রভাবশালী নাম, ১৩৩ বছর বয়সী কোম্পানি ইস্টম্যান কোডাক (Eastman Kodak)। ক্যামেরা এবং ফিল্মের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করা এই প্রতিষ্ঠানটি সম্ভবত তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে। সম্প্রতি তারা এমন একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে, যা কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করার মতো নগদ অর্থ বা অন্য কোনো উৎস নেই। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারে টিকে থাকার জন্য কোডাক তাদের অবসরকালীন পেনশন স্কিমের অর্থ পরিশোধ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়া, শুল্কের কারণে তাদের ব্যবসায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও তারা মনে করছে, কারণ ক্যামেরা, কালি এবং ফিল্মের মতো তাদের অনেক পণ্যই তারা যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি করে।

কোডাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিম কন্টিনেনজা জানিয়েছেন, অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, শেয়ার বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার কোডাকের শেয়ারের দাম ৭ শতাংশের বেশি কমে যায়।

কোম্পানিটির ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৭৯ সালে জর্জ ইস্টম্যান একটি প্লেট-কোটিং মেশিনের পেটেন্ট পাওয়ার মধ্যে দিয়ে কোডাকের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৮৮ সালে, ইস্টম্যান প্রথম কোডাক ক্যামেরা বিক্রি করেন, যার দাম ছিল ২৫ ডলার।

সেই সময়ে, ফটোগ্রাফি ছিল বেশ কঠিন একটি বিষয়, কারণ এর জন্য বিশেষ দক্ষতা এবং সরঞ্জামের প্রয়োজন হতো। কিন্তু কোডাক ক্যামেরা ফটোগ্রাফিকে সবার কাছে সহজলভ্য করে তোলে। ইস্টম্যানের বিখ্যাত স্লোগান ছিল, ‘বোতাম টিপুন, আমরা বাকিটা করব’।

‘কোডাক’ নামটি ছিল একেবারেই অর্থহীন, যা ইস্টম্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কে’ অক্ষরটি আমার খুব প্রিয়— এটি শক্তিশালী ও দৃঢ়তা প্রকাশ করে।’

একসময় কোডাক ক্যামেরা ও ফিল্ম তৈরিতে একশো বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করেছে। সত্তরের দশকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্মের বাজারের ৯০ শতাংশ এবং ক্যামেরার বাজারের ৮৫ শতাংশ ছিল তাদের দখলে। পল সাইমনের জনপ্রিয় গান ‘কোডাক্রোম’ ১৯৭৩ সালে চার্ট শীর্ষে ছিল।

কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোডাক তাদের এই শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। তারা ডিজিটাল ক্যামেরার উদ্ভাবক হলেও, সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারেনি। ফলস্বরূপ, ২০১২ সালে কোডাক দেউলিয়া হয়ে যায়।

দেউলিয়া হওয়ার সময় তাদের ১ লক্ষের বেশি পাওনাদার ছিল এবং ঋণের পরিমাণ ছিল ৬.৭৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের ওষুধ তৈরির উপাদান প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করার জন্য নির্বাচিত করে। এর ফলে কোডাকের শেয়ারের দাম দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি, কোডাক জানিয়েছে তারা তাদের ব্যবসার এই অংশটি আরও প্রসারিত করতে চায়।

বর্তমানেও তারা চলচ্চিত্র শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসার জন্য ফিল্ম ও রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করছে এবং বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের জন্য তাদের ব্র্যান্ড ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *