দৌড়ের ম্যারাথনে কেন এত মানুষের ঢল?

বিশ্বজুড়ে ম্যারাথন দৌড়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, আর এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। খেলাধুলাপ্রেমীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এখন ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে, যা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যারাথনে রেকর্ড সংখ্যক দৌড়বিদ অংশ নিচ্ছেন, যা এই আগ্রহেরই প্রমাণ।

লন্ডন ম্যারাথন শুধু একটি দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, এটি এখন অনেক মানুষের আবেগ আর অনুভূতির প্রকাশস্থল। এখানে কেউ অংশ নেন প্রিয়জনের স্মৃতিতে, আবার কেউবা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য দৌড়ান। কারো কাছে এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির উপায়, আবার কারো কাছে নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। এই ম্যারাথন যেন এক মিলনমেলা, যেখানে বিভিন্ন মানুষ তাদের ব্যক্তিগত গল্প নিয়ে একত্রিত হন।

এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পেছনে থাকে ভিন্ন ভিন্ন অনুপ্রেরণা। কেউ প্রিয়জনের স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলেন, আবার কেউ সমাজসেবার উদ্দেশ্যে দৌড়ান। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ নাগরিক জুলি রাইট তার প্রয়াত মেয়ের স্মরণে এবং স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে এই ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন। তার মতে, দৌড় তার জীবনে এক গভীর শোকের সময়ে সাহস জুগিয়েছে। তিনি বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর পর আমি নিজেকে ফিট রাখতে চেয়েছিলাম, আর ৬০ বছর বয়সেও যে আমি বেঁচে আছি, এটা উদযাপন করতে চেয়েছিলাম।”

শুধু জুলি রাইট নন, এমন আরও অনেকে আছেন যারা এই ম্যারাথনকে বেছে নিয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত শোক ও সংগ্রামের বিরুদ্ধে লড়াই করার হাতিয়ার হিসেবে। ১৯ বছর বয়সী যমজ বোন, কেটি এবং আনা রোল্যান্ড তাদের প্রয়াত বাবার স্মৃতিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছেন। তাদের বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তারা বলেন, “বাবা যে কষ্ট সহ্য করেছেন, তার তুলনায় কয়েক ঘণ্টার দৌড় কিছুই না।”

এই দৌড়ের গুরুত্ব শুধু শারীরিক সক্ষমতা বা অর্থ সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক দৌড়বিদ এর মাধ্যমে সমাজের জন্য কিছু করতে চান। ডেভিড ওয়েদারিল নামের একজন প্যারা-অলিম্পিয়ান তার উদাহরণ। তিনি ক্রাচে ভর করে দ্রুততম সময়ে ম্যারাথন শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছেন, যা শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগের গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও তার অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়াও, অনেকে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। যেমন, লুক রচে নামের একজন ব্যক্তি তার প্রয়াত দাদার সম্মানে এবং একটি দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। এমনকি যারা দৌড় ভালোবাসেন না, তারাও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন। লিজ নিউকামার নামের একজন নারী মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দৌড় শুরু করেছিলেন, এবং এখন তিনি দশটি ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন।

লন্ডন ম্যারাথনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। গত বছর নিউইয়র্ক সিটি ম্যারাথনে ৫৫,৬৪৬ জন দৌড়বিদ অংশ নিয়েছিলেন, যা একটি রেকর্ড। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের লন্ডন ম্যারাথনে সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। এই দৌড় প্রতিযোগিতা সবার কাছে এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে, এটি এখন শুধু একটি খেলা নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি মাধ্যম হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *