সন্তান না হওয়ার কারণ: ভালোবাসার যোগ্য হতে চেয়েছিলাম!

নতুন জীবনের খোঁজে: এক নারীর মাতৃত্বের ভিন্ন সংজ্ঞা

প্রত্যেক নারীর জীবনেই এক সময় আসে যখন সমাজের চোখে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে শুরু করে। বিয়ে, সংসার এবং মাতৃত্ব—এগুলো যেন নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিন্তু জীবনের এই পথটি সবার জন্য একরকম হয় না। অনেকের কাছে, বিশেষ করে যারা অবিবাহিত বা সন্তান ধারণ করেননি, তাদের প্রতি সমাজের প্রত্যাশাগুলো যেন আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি, ৫২ বছর বয়সী সারা গোর্মলি নামের এক নারীর জীবনের গল্প প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি মাতৃত্বের ধারণা এবং নিজের ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে ভালোবাসার যোগ্য হওয়াটাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

গোর্মলি তার কৈশোরে মা-বাবার মতো একটি সুখী পরিবারের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি সবসময় মনে করতেন, বিয়ে এবং সন্তান—এগুলোই তার জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য।

বন্ধুদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি একটি মেয়ের নাম ঠিক করেছিলেন ‘হ্যানরি ক্যামেরন গোর্মলি’।

কিন্তু জীবনের পথ সব সময় সরল রেখায় চলে না। একসময় তিনি উপলব্ধি করেন, মা হওয়ার জন্য যে সময়টুকু হাতে আছে, তা ফুরিয়ে আসছে। এরপর তিনি কৃত্রিম প্রজনন (আইভিএফ) পদ্ধতির কথা ভাবেন এবং বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

তিনি একা মা হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভেবেছিলেন। এমনকি তিনি কেমন মা হতে পারেন, সেই সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করেছিলেন।

গোর্মলি বলেন, “আমি জানতাম, আমি একাই আমার মেয়ের দেখাশোনা করতে পারব। ভালো স্কুলে পড়াতে পারব, ন্যানি রাখতে পারব, এবং কাজের সূত্রে দেশের বাইরে গেলে নিয়মিত তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারব। কিন্তু গভীর অনুসন্ধানের পর আমি বুঝতে পারি, একা সন্তান নেওয়ার চেয়ে আমার একজন ভালোবাসার মানুষ প্রয়োজন।”

আসলে, তিনি এমন একজন মানুষকে চেয়েছিলেন যিনি তাকে ভালোবাসবেন এবং তাদের ভালোবাসার ফসল হিসেবে একটি নতুন জীবন তৈরি করতে আগ্রহী হবেন। এই উপলব্ধি তাকে হতাশ করেছিল, কিন্তু একই সঙ্গে এনে দিয়েছিল আত্ম-উপলব্ধি।

গোর্মলি আরও বলেন, “আমি বুঝতে পারলাম, সন্তান নেওয়ার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ভালোবাসার যোগ্য হওয়া। আমি চেয়েছিলাম এমন একজন মানুষ, যিনি আমাকে ভালোবাসবেন এবং আমার সঙ্গে একটি সুন্দর জীবন গড়তে চাইবেন।”

নিউ ইয়র্কের চেলসিতে নিজের বাড়ির বারান্দায় বসে সূর্যাস্ত দেখার সময় তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করতেন, যা তাকে একাকীত্বের গভীরতা সম্পর্কে আরও বেশি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। তিনি সবসময় অনুভব করতেন, নিজের আত্ম-মর্যাদা অর্জনের জন্য তাকে অনেক কিছু করতে হবে।

এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে গোর্মলি নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন—তিনি ভালোবাসার যোগ্য। সম্ভবত এই উপলব্ধির কারণেই তিনি আজকের দিনে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে মা দিবসে।

কারণ, এই সিদ্ধান্ত তাকে নিজের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখিয়েছে।

সারা গোর্মলির এই আত্ম-অনুসন্ধান আমাদের সমাজের চোখে নারীর মাতৃত্বের ধারণাকে নতুনভাবে দেখতে উৎসাহিত করে।

এটি একজন নারীর ব্যক্তিগত পছন্দ এবং তার আত্ম-উপলব্ধির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *