যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কোরিয়ান এয়ারের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াল্টার চো। যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা কমার পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে চো জানান, ট্রান্স-প্যাসিফিক এবং ইউরোপীয় রুটে যাত্রী সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। যদিও এই হার খুব বেশি নয়, তবে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে ব্যবসার ওপর। ধারণা করা হচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে কোরিয়ান এয়ারের প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে।
কোরিয়ান এয়ারের প্রধান নির্বাহী আরও উল্লেখ করেন, কোরিয়ার অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতির ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। তাই এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত হচ্ছেন। যদিও পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নাও থাকতে পারে, এমনটাই মনে করেন তিনি।
বর্তমানে, কোরিয়ান এয়ার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এশিয়ানা এয়ারলাইন্সকে অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে শুধু কোরিয়ান এয়ারই নয়, ডেল্টা এয়ার লাইন্স সহ আরও অনেক খ্যাতনামা বিমান সংস্থা তাদের আয়ের পূর্বাভাস দিতে পারছে না।
তবে, চো এখনো বেশ আশাবাদী। তার মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ “শীঘ্রই” শেষ হবে এবং কোরিয়ান এয়ার লাভজনক অবস্থানে থাকবে। তিনি মনে করেন, যাত্রী হ্রাসের অন্যতম কারণ হলো ভ্রমণকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, যা কোভিড-১৯ এর আগের পর্যায়ে ফিরে আসছে।
এই পরিস্থিতিতেও কোরিয়ান এয়ার তাদের আমেরিকান ফ্লাইটগুলো চালু রাখার পরিকল্পনা করছে। গ্রীষ্মকালে সিউল থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস এবং আটলান্টার উদ্দেশ্যে এয়ারবাস এ৩৩০ এবং বোয়িং ৭৪৭ বিমান পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। চো’র মতে, গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য রিজার্ভেশন বেশ ভালো আছে। তাই যাত্রী সংখ্যা ৫-১০ শতাংশ কমলেও তারা ফ্লাইট বন্ধ করবে না।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কার্গো ফ্লাইটগুলোতেও সমস্যা হতে পারে। কারণ কোরিয়ান এয়ারের ব্যবসার প্রায় ৪০ শতাংশই আসে কার্গো থেকে। এই পরিস্থিতিতে তারা ইউরোপ ও অন্যান্য বাজারে তাদের কার্গো পরিষেবা প্রসারিত করার কথা ভাবছে। একইসাথে, চীন ও কানাডার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায়, সেই দিকেও নজর রাখছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর সেমিকন্ডাক্টর চিপস (semiconductor chips) রপ্তানি হয়। তাই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কোরিয়ান এয়ার ক্ষতির শিকার হতে পারে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন সেমিকন্ডাক্টর, স্মার্টফোন, কম্পিউটার মনিটর এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক আরোপ করা থেকে বিরত থেকেছে, তারপরও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
ভবিষ্যতে যাত্রী অভিজ্ঞতার মান আরও উন্নত করতে কোরিয়ান এয়ার তাদের অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধা আপগ্রেড করার পরিকল্পনা করছে। নতুন সিট ও কেবিন যুক্ত করা হবে, যা যাত্রীদের ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক করবে।
ওয়াল্টার চো মনে করেন, এই মুহূর্তে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা চললেও, যাত্রী সেবার মান উন্নত করতে তাদের এই বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা উচিত।
তথ্যসূত্র: সিএনএন