যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইউনসো চং, যিনি কোরীয় বংশোদ্ভূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
চংয়ের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া নীতিরই অংশ।
২১ বছর বয়সী ইউনসো চং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি ৫ই মার্চ একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় গ্রেফতার হন।
এরপরই অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) তাকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। চংয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের কার্যকলাপ মূলত ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে জড়িত শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করার একটি চেষ্টা।
আদালতে দাখিল করা নথিতে বলা হয়েছে, আটকের কয়েক দিন পর আইসিই কর্মকর্তারা একটি প্রশাসনিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে চংয়ের বাবা-মায়ের বাড়িতে যান এবং তাকে আটকের চেষ্টা করেন।
কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউনসো চং “আপত্তিকর আচরণে” জড়িত ছিলেন এবং একটি “হামাসপন্থী বিক্ষোভে” অংশ নিয়েছিলেন। তবে চংয়ের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী চংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি একজন অভিবাসন বিচারকের সামনে তার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পাবেন।” যদিও চংয়ের পরিবারের বাড়িতে একাধিকবার গেলেও অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটক করতে পারেননি।
জানা গেছে ইউনসো চং তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি আদালতে আবেদন করে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে প্রতিহত করার আবেদন জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করা অন্যান্য বিদেশি নাগরিকদের বিতাড়িত করার চেষ্টা বন্ধের জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
চংয়ের মামলার আইনজীবী বলেছেন, “মিস চংয়ের বিরুদ্ধে আইসিই-এর এই ধরনের পদক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের ওপর দমন-পীড়নের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
আদালতে এই মামলায় জয়ী হলে, ট্রাম্প প্রশাসনের সেই পদক্ষেপগুলো আটকে যেতে পারে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করা বিদেশি নাগরিকদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চংয়ের মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনপন্থী ইস্যুতে কথা বলা আরও পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
এরকম একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মাহমুদ খলিল। তাকে আটক করে গ্রিন কার্ড বাতিলের কথা জানানো হয়েছিল।
খলিল গত সেমিস্টারে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলম্বিয়া কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এছাড়াও, কর্নেল ইউনিভার্সিটির মোমোদু টাল নামের এক শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ভারতীয় শিক্ষার্থী বাদর খান সুরীকেও আটক করা হয়েছিল, তবে একজন ফেডারেল বিচারক তার বিতাড়ন স্থগিত করেছেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্কুলের একজন অধ্যাপককেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের “সন্ত্রাসী”, “জাতিবিদ্বেষী” এবং “মার্কিন-বিরোধী” হিসেবে অভিযুক্ত করে তাদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
বিক্ষোভকারী এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা